স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার মাইজবাড়ী-মাদারিয়া সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে চরমভাবে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের মাইজবাড়ী অংশে মাত্র ১০০ থেকে ১২০ মিটার রাস্তার এমন করুণ দশা। যা এখন কয়েকটি গ্রামের মানুষের জন্য গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। রাস্তাটির খোয়া উঠে গিয়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় এটি পাকা সড়ক ছিল। এখন তা বোঝার উপায় নেই। খানাখন্দে ভরা এই অংশ দিয়ে হেঁটে চলাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন অতিষ্ঠ স্থানীয়রা।
জানা গেছে, উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ী-মাদারিয়া আঞ্চলিক সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের বেশিরভাগ অংশ ভূঞাপুর পৌরসভার আওতায় থাকলেও মাত্র ১০০-১২০ মিটার অংশ রয়েছে ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে। পৌরসভার অংশটি বহু আগেই পাকা করা হলেও মাইজবাড়ী অংশটি আজও অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে বিগত ২০২১ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও অনাগ্রহের কারণে এখনও সংস্কার হয়নি। ফলে প্রতিদিন কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, বিগত ২০১৮ সালের দিকে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে মাইজবাড়ী অংশের এই ১২০ মিটার সড়ক আরসিসি ঢালাই দিয়ে নামমাত্র পাকাকরণ করা হয়েছিল। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙে যায়। পরে বিগত ২০১৯ সালে ভূঞাপুর এলজিইডি সড়কের বাকি অংশ পাকা করলেও মাইজবাড়ী অংশ অপরিবর্তিত থেকে যায়। ফলে এলাকার মানুষ পুরো সড়কের সুফল পাননি। বর্তমানে ভাঙাচোরা ওই অংশ দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করে না বললেই চলে। বৃষ্টি হলে হেঁটে চলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এক বছর আগে গ্রামবাসীর অনুরোধে এক ট্রাক বালু ফেলা হলেও ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদু কোনো সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেননি।
জানা গেছে, তিনি অত্র ওয়ার্ডেরই মাদারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। টানা ১৫ বছর চেয়ারম্যান থাকলেও নিজ এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। স্থানীয়দের দাবি, দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন ফ্ল্যাট, গ্রামে নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি। অথচ তার প্রতিবেশী মাইজবাড়ী গ্রামের বেশিরভাগ রাস্তাই এখনো কাঁচা।
মাইজবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জুব্বার আলী বলেন, পৌরসভার সীমান্তঘেঁষা এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু মাইজবাড়ী অংশের দুরবস্থার কারণে কেউ আর এই রাস্তা ব্যবহার করতে চায় না। প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে টেপিবাড়ী হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। যারা বাধ্য হয়ে এই রাস্তা ব্যবহার করেন। তারা প্রায়ই সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আলিফ মিয়া বলেন, এই রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে পরিষদ কার্যালয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পলিশা গ্রামের বাসিন্দা যুবদল নেতা রঞ্জু মন্ডল বলেন, পাকা সড়কটির মাত্র ১২০ মিটার অংশ দিয়ে এখন হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর। এক কিলোমিটার সড়কের এই অংশটি সংস্কার না হওয়ায় পুরো রাস্তাটিই এখন আমাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। সাবেক চেয়ারম্যানকে প্রকল্প এলেই জানিয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কোনো কারণে তিনি এখানে কাজ করতে আগ্রহ দেখাননি। বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যানকেও বলেছি, তিনিও কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অথচ তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক মাসে তার এক ওয়ার্ডেই প্রায় ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। আর আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
এ ব্যাপারে ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু সাঈদ স্বপন বলেন, বিষয়টি মেম্বারকে বলে দিয়েন, আমিও স্বরণে রাখব। পরবর্তীতে প্রকল্প এলে তখন দেখা যাবে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, রাস্তাটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।