
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জোর করে নেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্কুলটির প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্ররা। মিছিলটি স্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এনসিপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয় এসব শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বর্তমান শিক্ষার্থী সাইফুল বারী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী তানজিল আহমেদ, সজিব আহমেদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এনসিপির নেতারা মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা শিক্ষকদের অনুমতি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের এনসিপির সমাবেশে যেতে বাধ্য করেন। বক্তারা আরও বলেন, যাঁরা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য করেছেন, তাঁদের শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দিবা শাখার ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস শেষে ছুটি হয়েছিল। কিন্তু পরে স্কুলের পাশে নিরালা মোড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশের মাইকের শব্দের কারণে নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস ছুটি দেওয়া হয়। কারা সমাবেশে গেছে, তা আমাদের জানা নেই। বুধবার (৩০ জুলাই) শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক বলেন, একটি প্রতিবাদ মিছিল ছাত্ররা করেছে। আমাদের সঙ্গে কথা বলে এ কর্মসূচি তারা পালন করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেল বলেন, আমি এ নিয়ে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা তাদের বলেছি, ভবিষ্যতে এনসিপির কোনো প্রোগ্রামে তাদের আনা হবে না।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে শহরের শামছুল হক তোরণ এলাকা থেকে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে নিরালা মোড়ে পথসভা হয়। এতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
এদিকে এনসিপির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আজাদ খান ভাসানী বুধবার (৩০ জুলাই) ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রায় টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনীর শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হওয়া নিয়ে দলীয় কোনো নির্দেশনা বা ভূমিকা ছিল না। বিচ্ছিন্নভাবে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। আমাদের পদযাত্রা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালে ছাত্রীরা প্রথমে নাহিদ ইসলাম, ডা. জারা, সামান্তা শারমিনদের স্বাগত জানাতে আসে। স্টেজের কাছাকাছি পৌঁছালে কিছু ছাত্র সারজিস আলমসহ সবাইকে ঘিরে ধরে। কেউ কেউ ছবি উঠাতে চায়। পরবর্তীতে জানতে পারি, বিন্দুবাসিনীর ছাত্ররা নাহিদ ইসলামের কাছে কিছু দাবি জানাতে চায়। কিন্তু ঘটনাটি পরবর্তীতে অন্য দিকে মোড় নেয়।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন টাঙ্গাইল জেলার সাবেক সদস্য সচিব আহমেদ শেরশাহ ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং দুঃখ প্রকাশ করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকেও আমরা এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’