
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজে পিতা-পুত্রের অংশগ্রহণে তিন যুগের বেশি বয়সের বিভিন্ন প্রজাতির ২১টি গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কোন প্রকার প্রচারণা ছাড়াই গোপনে গাছগুলো বিক্রি করেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে শুধুমাত্র লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে গত (২৫ সেপ্টেম্বর) উন্মক্ত নিলামে গাছগুলো বিক্রি করা হয়।
নিলামে কালাম এন্টারপ্রাইজ, দুই ছেলে মেহেদী হাসান আকাশ এন্টারপ্রাইজ ও খালিদ হাসান বাপ্পি এন্টারপ্রাইজ নামে পিতা-পুত্রের তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেন। কলেজের অধ্যক্ষ ও টেন্ডার কমিটির সাথে সমন্বয় করে আবুুল কালাম আজাদ ও তার দুই ছেলে আকাশ এবং বাপ্পির নামে দরপত্র জমা দেন। পিতা-পুত্রের অংশগ্রহণেই টেন্ডার পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে সরকারি কলেজের বিশাল আকৃতির ২১টি গাছ গোপনে বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হলে কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের বিশাল আকৃতির ১৫টি মেহগনি, তিনটি আকাশমনি, দুটি নিম ও একটি লিচু গাছ বিক্রির জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নুরুল ইসলাম মিয়াকে প্রধান করে হাফিজুর রহমান ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাসক আবু তারেককে সদস্য করা হয়। কমিটির সদস্যরা বন বিভাগের সাথে সমন্বয় করে গাছগুলো বিক্রির জন্য এক লাখ ৩০ হাজার ৭৩০ টাকা সরকারি দাম নির্ধারণ করেন। কমিটি গোপনে গত (২২ সেপ্টেম্বর) নিলাম বিক্রির নোটিশে (২৫ সেপ্টেম্বর) গাছগুলো বিক্রির জন্য দিন ধার্য করেন। নির্ধারিত সময়ে দরপত্র আহবানকারী বাবা ও দুই ছেলে ছাড়া আর কোন ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন না। সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মাত্র এক হাজার ২৭০ টাকা বেশি দামে আবুল কালাম আজাদের কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়।
এছাড়া মেহেদী হাসান আকাশ এক লাখ ২০ হাজার এবং খালিদ হাসান বাপ্পি এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দরপত্র আহবানকারীদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতা নির্বাচিত করা হয়। আগামী (১১ অক্টোবরের) মধ্যে গাছগুলো অপসারণের নির্দেশনা দিয়ে অধ্যক্ষ দরপত্রদাতাকে পত্র দিয়েছেন।
সরকারি কলেজের বিশাল আকৃতির ২১টি গাছের আনুমানিক ৪০০ ঘনফুট কাঠের এক হাজার টাকা ঘনফুট দামে আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় চার লাখ টাকা হবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এছাড়া অর্ধ লাখ টাকার লাকরিও বিক্রি করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ গাছগুলো গোপনে মাত্র এক লাখ ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এ বিষয়টি জানাজানি হলে কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একজন স্টাফ জানান, নিলামের প্রচার সঠিকভাবে করা হলে গাছের মূল্য আরও অনেক বৃদ্ধি পেতো। আমরা ছোট মানুষ। আমাদের কথা কে শুনবে। একই কলেজের সাবেক জিএস কলেজ সীমানার ১৫ ফুট দুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, কিভাবে এতোগুলো গাছ বিক্রি করা হলো জানতেই পারলাম না। তবে নায্যমূল্যে বিক্রি হলে ভালো হতো।
কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নুরুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কলেজের প্রধান ফটকে টেন্ডার নোটিশ সাটিয়েছিলেন। তাছাড়া ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। মাইকিং করা হয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে না করেন। তিনজন দরপত্র দাতার উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কমিটির সদস্য প্রভাষক হাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষকদের গাছ বিক্রির কাজ না। আমাদের গাছ সম্পর্কে ধারণা নেই। অংশগ্রহণকারী তিনজন দরপত্রদাতা বাবা-ছেলে সম্পর্কের তা জানা ছিলো না। তবে শহরে ও দেওহাটা এলাকায় মাাইকিং করা হয়েছিলো। আমরা টেন্ডার পক্রিয়া সম্পন্ন করেছি মাত্র। বিক্রি করেছেন প্রিন্সিপাল স্যার।
সর্বোচ্চ দরদাতা আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি এক লাখ ৩২ হাজার টাকায় গাছগুলো ক্রয় করেছেন। নিলামে অংশগ্রহণকারী বাকি দুইজনের সাথে আপনার সম্পর্ক কি জানতে চাইলে তার ছেলে বলে পরিচয় দেন তিনি।
গাছ কাটার শ্রমিক জাবেদ মিয়া বলেন, চারটি গাছ কেটেছেন। একটি গাছ ৬ ফুট প্রশস্থ ২৪ ফুট লম্বা, একটি ৫ ফুট প্রশস্থ ১২ ফুট লম্বা, বাকি দুটি ৫ ফুট প্রশস্থ ৩০ ফুট লম্বা ছিলো। এছাড়া চারটি গাছের ১০০ মন লাকরি বিক্রি করা হয়েছে। বাকি গাছগুলো কাটার পক্রিয়া চলমান।
কলেজ গেটের ২শ গজ সামনে ফার্নিচার ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম বলেন, কলেজের কোন গাছ বিক্রির পক্রিয়া হলেই জানতে পারি। এতোগুলো গাছ বিক্রি হলো, অথচ কাছে থেকেও জানতে পারলাম না। ২১টি গাছে লাকরি বাদে আনুমানিক ৪০০ ঘনফুট কাঠ হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জুুবদিল খান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, গাছ বিক্রি বা কর্তনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ কিভাবে গাছগুলো বিক্রি করেছেন তা বোধগম্য নয়।
শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ওছমান গনি বলেন, গাছের ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগের জন্য নির্দেশনা ছিলো। এজন্য সময়ও দেয়া হয়েছিলো। টেন্ডার পক্রিয়ায় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাছগুলো বিক্রি পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম জানান, গাছ বিক্রির বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে অবহিত করেনি।






