
সাদ্দাম ইমন ॥
প্রায় ২শ’ বছরের পুরনো টাঙ্গাইল শহরে অবস্থিত কান্দাপাড়া যৌনপল্লী। এখানে প্রায় ৮শ’ ঘরে পাঁচ শতাধিক কর্মীর বসবাস। দেহ ব্যবসার জন্য গড়ে ওঠা এ পল্লীতে এখন বিভিন্ন বয়সী যৌনকর্মীরা বসবাস করেন। এখানে যারা অপেক্ষাকৃত সুন্দরী তারাই সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। একমাত্র যারা সুশ্রী তাদের কদর রয়েছে, রোজগারও ভালো। এখনও যৌন চাহিদা মেটাতে পল্লীতে আসেন কিছু খদ্দের, নেশা গ্রহণে আসেন মাদক সেবীরাও।
জানা যায়, টাঙ্গাইল কান্দাপাড়া যৌনপল্লীতে প্রায় ৪/৫ শত যৌনকর্মী বসবাস করেন। তাদের মধ্যে সুশ্রী যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় একশ’ জনের মতো। বাকি কিছু যৌনকর্মীর অনাহারে আর অর্ধাহারে দিন কাটছে। প্রতিদিন ঘরভাড়া ও খাবার সংগ্রহ করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। পেটের তাগিদে খদ্দেরের খাম-খেয়ালীপনায় বেশির ভাগই স্বাভাবিক যৌনতা অনিরাপদ যৌনতায় রূপ নেয়। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে লিপ্ত হন খদ্দেরদের বিকৃত যৌনাচারে ও মাদক বিক্রিতে। খদ্দেরের চাহিদা মেটাতে কেউ কেউ হয়ে পড়েন গর্ভবতীও।
এ বিষয়ে একাধিক যৌনকর্মীরা অভিযোগ করে জানান, এখানে যৌনপল্লীর কর্মীরা সারিবদ্ধভাবে বসে থাকে খদ্দেরের জন্য। বেশিরভাগ সময় খদ্দের মেলে না। কিন্তু যারা মাদকের সাথে জড়িত তাদের কর্মচাঞ্চল্যতা রয়েছে। তাদের কদর এখানে বেশি, তারা মাদক সেবিদের আশ্রয় দেয় ও নিজে মাদক গ্রহণ করেন। অথচ যারা মাদকের সাথে জড়িত নয় তাদের অনেকেই তিনবেলা ঠিকমত খেতেও পায় না। তবে ব্যাতিক্রমও আছে। যারা সুশ্রী ও সুন্দরী তাদের কদর রয়েছে। তাদের রোজগারও ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকলে খদ্দের বাড়ে।
যৌনকর্মী মাহী (ছদ্মনাম) বলেন, দালালের খপ্পরে পরে যৌনপল্লীতে এসেছিলেন আমার মা। আমার জন্ম এই যৌনপল্লীতেই। ছোট বেলায় স্কুলে পড়াশোনা করেছি। যখন বুঝতে শিখলাম যে আমার মা একজন পতিতা। তার ঘরে নানা বয়সের পুরুষ মানুষ আসে, গল্প করে, হাসাহাসি করে। প্রথম প্রথম আমার মেনে নিতে কষ্ট হতো। সে সময় আমি অসহায় হয়ে বাহিরের জগতে চলা আমার বয়সী মেয়েদের দেখতাম। খুব চেয়েছি আমার যদি এমন একটা জীবন থাকতো! যখন বড় হই মা তখন বৃদ্ধ। দু’বেলা খাবার জোটে না আমাদের। অনেক ভেবে চিন্তে যৌনকর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আয় রোজগার ভালই। আমারও একটা ৬ মাসের সন্তান আছে। আমি চাই আমার সন্তান যেন আমার মতো এই জীবন কষ্টে না ভোগে। সে যেন কখনও জানতে না পারে আমার যৌনপল্লীর এমন জীবনের কথা। এ কারনেই আয় রোজগার ভালো থাকা সত্বেও পেশাটা পরিবর্তন করা আমার জরুরি হয়ে পড়েছে।
দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে আসা যৌনকর্মী লিমা (ছদ্মনাম) বলেন, যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছি ১৪-১৫ বছর ধরে। বয়স হওয়ায় এখন আয় কমে গেছে। তবুও এখানেই পরে আছি। এই বয়সে আর যাবো কোথায়? নিজ এলাকায় যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখানে ছোট্ট একটা দোকান চালাই। চা-কফিসহ ডিম, খিচুড়ি, ভাত বিক্রি করি। যৌনকর্মীরাই আমার কাষ্টমার। তারা অনেকেই বাসাভাড়া দিতে পারে না। বাকি খেতে চায়। বাকি বিক্রি বন্ধ করে দিছি। তাদের মুখের দিকে চেয়ে খারাপ লাগে, কিন্তু কিছু করার নাই। যদি সুযোগ হতো, দুমুঠো ডাল-ভাতের নিশ্চয়তা হতো- তাহলে এখান থেকে চলে যেতাম। সব ধর্মের মানুষ আসে এখানে শুধু আমাদেরই কোন ধর্ম নাই।
যৌনকর্মী আছিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, যৌনপল্লীতে এখন আর আগের মতো রোজগার নাই। বিভিন্ন উৎসবেও কোনো রোজগার হয় না। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা নেই। নিজের খাবার আর বাসা ভাড়া দিতে পারি না। বাসা ভাড়া দিতে না পারায় প্রতিদিনই বাড়ছে দেনা। পেশা বদলের সুযোগ থাকলে অন্য কিছু করতাম। এখন আর ভালো লাগে না। এখানকার জীবন অনেক কষ্টের।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যৌনকর্মীদের প্রতিবন্ধী হিসেবে ট্রিট করি আমরা। এসব সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য আমাদের টাঙ্গাইলের সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত কোনো কার্যক্রম নেই।