
স্টাফ রিপোর্টার ॥
নিজ নির্বাচনী গণসংযোগ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহনের মৃত্যু হয়েছে। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত সোয়া ৭টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হক। হামিদুল হক মোহনের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। প্রবীণ এই রাজনীতিক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ জানান, গত (১২ অক্টোবর) দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন হামিদুল হক মোহন। এজন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার দেউলী ইউনিয়নে যান। সেখানে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন। সভা শেষ করে পাশের মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন। পরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের উদ্দেশে রওনা হন। কিছু দূর যাওয়ার পর অসুস্থ বোধ করেন। সেখান থেকে তাঁকে অচেতন অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের সিসিইউতে তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
ব্যক্তিজীবনে হামিদুল হক মোহন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের (ভাষা মতিন) ভগ্নিপতি। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়ে রেখে গেছেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়ায় তার নিজ বাসভবনে রাখা হয়।
হামিদুল হক মোহনের বড় ছেলে মিল্টন হক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বাদ যোহর বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁর বাবার দাফন করা হবে।
হামিদুল হকের গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন নাগরপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সভাপতি প্রভা রানী শীল। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে দেউলী গ্রামে শেষ বক্তব্যে আবেগঘন বক্তব্য দেন মোহন ভাই। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমার মাথার চুল সব পেকে গেছে। তাই মনে করবেন না যে আমি আপনাদের কাজ করতে পারব না। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। হামিদুল হকের ঘনিষ্ঠ নেতারা জানান, স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন হামিদুল হক মোহন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি টাঙ্গাইল জেলা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর ভাসানী ন্যাপের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরে ভাসানী ন্যাপ বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়।
তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালে সভাপতি হন। টানা ১৭ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন হামিদুল হক মোহন। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে নানা মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।






