
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলে বিগত তিন বছর যাবৎ জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশা চুরির বিচার ও প্রতিকার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মাজেদুর রহমান নামে এক অসহায় অটোচালক। অটোরিকশা চোর চক্রটি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকায় তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। বরং প্রতি পদে পদে তাকে সহ্য করতে হয়েছে অবজ্ঞা ও দুর্ব্যবহার। এখন মাজেদুর একটি মুদির দোকানে কাজ করেন। মুদির দোকানের অল্প আয়ে সে কোনরকমে দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অটোরিকশা চালিয়ে তিনি তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলেও বর্তমানে তিনি মুদির দোকানের সল্প আয়ে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে পড়ালেখা করাতে হিমশিম খাচ্ছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২৩ সালের (২৪ আগস্ট) সকালে তিনি তার অটোরিকশা নিয়ে প্রতিদিনের মতো জীবিকা নির্বাহের জন্য বের হন। সেদিন রাত ১০ টার সময় শহরের বড় কালিবাড়ী এলাকা থেকে একটি সাদা রংয়ের পাজেরো জিপ তাকে ফলো করে টাঙ্গাইল আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন সাব পোস্ট অফিসের সামনে তার অটোরিকশার গতি রোধ করে এবং অটোর চাবি ছিনিয়ে নেয়। তিনি তাতে বাধা দিলে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে আহত করে অটোরিকশা থেকে ফেলে দেয়। এ সময় তার বুক পকেটে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তার ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে অটোটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তার অটোরিকশাটি পৌরসভার লাইসেন্স ভুক্ত যার নাম্বার-১৫৩৬। পরে মাজেদুর রহমান বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন- টাঙ্গাইল পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার মৃত মাখন মিয়ার ছেলে মেহেদী (৪৫), মৃত কমল মিয়ার ছেলে তানজিল (৩০), লাল মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ (৩০), আশিক (২৫) (পিতা অজ্ঞাত), মমিন মিয়া (৪০) (পিতা অজ্ঞাত)।
অভিযুক্তরা সবাই তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় তৎকালীন টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশাররফ হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুরাদ হোসেন অভিযোগের ভিত্তিতে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, উল্টো মাজেদুর কে বিভিন্ন ধরনের হুমকি মকি-ধামকি দিতে থাকে। তাকে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্যও চাপ প্রয়োগ করে।
বিগত ২০২৪ সালের (৫ আগস্ট) তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে মাজেদুর পুণরায় টাঙ্গাইল সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানভীর আহমেদ তাকে কোন ধরনের অভিযোগ দায়েরের সুযোগ না দিয়ে বলেন, এটি অনেক পুরোনো ঘটনা ও আসামিরা সবাই পলাতক। ফলে পুণরায় আইনের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন অসহায় মাজেদুর।
মাজেদুর উপার্জনের একমাত্র সম্বল অটোরিকশাটি হারিয়ে বর্তমানে একটি মুদির দোকানে কাজ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোন রকমে দিন পার করছেন। মাজেদুর জানান, তিনি দিনমজুর ও অসহায় হওয়ায় শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রকাশ্যে তার অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে গেলেও থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। গত তিন বছর যাবত তিনি থানাসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রতিকার পাওয়ার আশায় কিন্তু সবাই তাকে অবহেলা ও অবজ্ঞা করেছে। তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি আশা করেছিলেন হয়তোবা এবার সুবিচার পাবেন। কিন্তু তিনি এবারো নিরাশ হয়েছেন। তিনি জানান, গরিবের জন্য শুধু আল্লাহ তায়ালাই রয়েছেন। আমি তার বিচারের আশায় রয়েছি।
সদ্য বদলিকৃত টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানভীর আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি তিন বছর আগের, এছাড়া অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ বদলি হওয়াতে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি মানবিক হলেও আইনগত প্রক্রিয়ার কারণে এগোনো সম্ভব হচ্ছে না।






