স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলে গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউনুছসহ কয়েকজন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। গত (১ অক্টোবর) বিকেলে টাঙ্গাইল পৌর শহরের ১৫ নং ওয়ার্ডের আশেকপুর এলাকার ঠাঁকুরবাড়ী সংলগ্ন ইউনুছের বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতে ভুক্তভোগী গৃহবধু থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করেন। থানা কর্তৃপক্ষ ধর্ষণ চেষ্টার পরিবর্তে মারধরের অভিযোগ নেয়ায় মামলা করেননি ভুক্তভোগী ওই গৃহবধু। এ ঘটনার পর থেকেই হামলাসহ প্রাণনাশের শঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত ও বাড়ী ছাড়া রয়েছেন ভুক্তভোগী গৃহবধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। আত্মীয় মৃত বিটকো মিয়ার ছেলে ইউনুছ (৫০), ইউনুছের ছেলে রাব্বি মিয়া (২২), মৃত রুহুল আমিনের ছেলে পিন্টু মিয়া (৩৮), মামুন মিয়া (৪৬), সিন্টু (৩০) ও শামীম মিয়ার (৪৫) বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার এ অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত (১ অক্টোবর) বিকেলে টাঙ্গাইল পৌর শহরের ১৫ নং ওয়ার্ডের আশেকপুর এলাকার ঠাঁকুরবাড়ী সংলগ্ন ইউনুছের বাড়ীর সামনে গৃহবধু আলপনা বেগম (৩৭) ও স্বামী মঞ্জু মিয়া (৫০) পৌছালে বিবাদীরা তাদের গালিগালাজ করতে শুরু করেন। গৃহবধু আলপনা প্রতিবাদ করায় বিবাদীরা ওই গৃহবধুকে জোড়পূর্বক ঘরের ভিতর নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা, মারধর ও নির্যাতন চালায়। স্বামী মঞ্জু এগিয়ে যাওয়ায় তাকেও মারধর করেন তারা। এ সময় স্থানীয়রা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় জড়িত সিন্টুর (৩০) বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা নামের এক সংখ্যালঘু নারী অপহরণ, গাড়ী পোড়ানো, হত্যার চেষ্টাসহ জাল টাকার ৪টি মামলা রয়েছে। এছাড়া শামীম মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা ও গাড়ী পোড়ানোর ২টি ও মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে একটি হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে বলেও জানান তারা।
গৃহবধু আলপনা বেগমের অভিযোগ, শ^শুরের জমি নিয়ে প্রায় ১৮ বছর যাবৎ বিরোধ চলছে আমার আত্মীয়দের সাথে। বিরোধ নিয়েই কয়েক দফায় আমাকে ও আমার স্বামীসহ ছেলেকে মারধর করেন তারা। এভাবে অত্যাচার করে আমাদের বাড়ী ছাড়া করা হয়েছে। বর্তমানে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে ভাগিনার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছি। ঘটনার দিন গত (১ অক্টোবর) বিকেলে আমি ও আমার স্বামী সবজি কেনার দোকানে যাচ্ছিলাম। এ সময় আশেকপুর এলাকার ঠাঁকুরবাড়ী সংলগ্ন আত্মীয় ইউনুছসহ হামলাকারিরা আমাদের উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে জোড়পূর্বক ঘরে ভিতর নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তারা আমাকে বেধরক নির্যাতন করে। আমার স্বামী এর প্রতিবাদ করায় তারা উনাকেও মারধর করেন। পরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এরপর হাসপাতাল থেকে আমি টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করতে যাই। আমি থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করার পরও সেখানে শুধু মারধরের অভিযোগ নেয়া হয়। আমার মেয়ে সেটি সংশোধন করার অনুরোধ করলেও থানা পুলিশ সেটি পরিবর্তন না করায় আমি থানায় মামলা করতে পারিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মাতাব্বর গাজী ওয়ারেছ বলেন, আমার দোকানের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই গৃহবধুকে ইউনুছসহ কয়েকজন জোড়পূর্বক ঘরের ভিতর আটকিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় ও নির্যাতন করেছেন। এ সময় তারা স্বামী এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। পরে আমরা এগিয়ে গিয়ে গৃহবধু ও তার স্বামীকে উদ্ধার করি। তারা সন্ত্রাসী হওয়ায় এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না বলেও জানান তিনি।
এদিকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউনুছ। তিনি বলেন, একটি জমি নিয়ে তাদের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের বিরোধ চলছে। ওই বিরোধের জের ধরে ঘটনার দিন আলপনা ও তার স্বামীসহ কয়েকজন আমার ছেলের মাথা ফাটায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুক্তা খানম জানান, আলপনার অভিযোগ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাটি পারিবারিক হওয়ায় থানায় এখনও মামলা দায়ের হয়নি।