আদালত সংবাদদাতা ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম আইনজীবী হয়েছেন জন জেত্রা। তিনি শুধু মধুপুরের গারো জাতিগোষ্ঠীর প্রথম আইনজীবী নন, টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির প্রথম গারো জাতির সদস্য। দীর্ঘ ১৩৭ বছরের আগে প্রতিষ্ঠিত জেলা বারে জন জেত্রার আগে গারো জাতির কেউ আইনজীবী হিসেবে যোগ দেননি। নিজ জাতিগোষ্ঠীর একজন আইনজীবী পেয়ে মধুপুরের গারোরা গর্বিত। আবার টাঙ্গাইলের আইনজীবীরাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই আইনজীবীকে গ্রহণ করেছেন ভালোবাসায়।
জানা যায়, ৩৪ বছর বয়সী জন জেত্রা টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বারে বিগত ২০২৩ সালের (২২ নভেম্বর) যোগদান করেন। তিনি এখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহজাহান কবিরের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি গারো জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও অংশ নিয়েছেন। ইকোপার্ক– বিরোধী আন্দোলন, গারোদের জমিতে বন বিভাগের লেক খনন বিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলন– সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে তিনি মধুপুরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সংগঠন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
জন জেত্রা বিগত ১৯৯০ সালের (১৮ সেপ্টেম্বর) মধুপুর গড় এলাকার ভুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম জর্নেশ নকরেক, মা মির্জনী জেত্রা। চার ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় জন জেত্রা। তিনি ভুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। বিগত ২০০৭ সালে পীরগাছা সেন্ট পৌলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। মধুপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে ময়মনসিংহ সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি বিগত ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। পরে বিগত ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন।
টাঙ্গাইল আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জন জেত্রা আদালত ভবন থেকে মামলার শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট বার সমিতির নিচতলায় তাঁর সেরেস্তায় আসছেন। সেখানে আসার পর সেবা প্রার্থীদের আইনগত পরামর্শ ও নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কাজ করার পর তিনি বেলা দুইটার দিকে বের হয়ে আসেন। তিনি জানান, বারে যোগদানের পর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। মধুপুর অঞ্চলের গারো জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বন মামলাসহ অনেক মামলায় জর্জরিত। তাঁরা আইনগত পরামর্শের জন্য, আইনগত সহায়তার জন্য তাঁর কাছে আসেন। তিনি গারো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম আইনজীবী। তাই গারোরা এবং মধুপুর অঞ্চলের বাঙালিরাও তাঁর প্রতি আস্থাশীল। টাঙ্গাইলের আইনজীবীদেরও স্নেহ–ভালোবাসা তিনি পাচ্ছেন।
জন জেত্রা বলেন, আমি আইন পেশায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পাশাপাশি আমার জাতির মানুষের আইনগত অধিকার আদায়ে কাজ করে যেতে চাই। আমি আমার জাতির মধ্যে টাঙ্গাইলে প্রথম আইনজীবী হয়েছি। আমার কাছে অনেক আশা আমার জাতির মানুষের। আমি তাঁদের পাশে থাকতে চাই। আমি টাঙ্গাইল শহরে অবস্থান করে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। তবে প্রতি শুক্র, শনিবারসহ অনান্য বন্ধের দিন মধুপুরে নিজ এলাকায় অবস্থান করি। সেখানে অনেকেই আমার কাছে আসেন আইনগত পরামর্শের জন্য। আমি তাঁদের পরামর্শ দিই।
মধুপুরের জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, মধুপুরের গারো জাতিগোষ্ঠীর অনেকেই আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কিন্তু জন জেত্রাই প্রথম এই জাতি থেকে বার কাউন্সিলের সনদ লাভ করে আইন পেশায় যোগদান করেছেন। তিনি আমাদের গর্ব। তাঁকে দেখে আরও অনেকেই আইন পেশায় যোগদান করতে উৎসাহিত হবেন।
টাঙ্গাইলের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারো জাতিগোষ্ঠীর অনেক লোকের বসবাস। কিন্তু জন জেত্রার আগে এই জাতির কেউ টাঙ্গাইল আদালতে আইন পেশায় আসেননি। জন জেত্রা ক্ষুদ্র একটি জাতিগোষ্ঠী থেকে প্রথম আইনজীবী হয়েছেন। এটা আনন্দের বিষয়।
টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহান শাহ সিদ্দিকী ওরফে মিন্টু বলেন, টাঙ্গাইল জেলা বারে বর্তমানে ৮৩০ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে জন জেত্রা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একমাত্র সদস্য। ওকালতনামায় তাঁর ক্রমিক নম্বর ৭৯৪। তিনি টাঙ্গাইল বারে গারো জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা প্রথম আইনজীবী।