স্টাফ রিপোর্টার ॥
আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ। ওই মহাসমাবেশে যোগ দিতে টাঙ্গাইল জেলা থেকে প্রায় ২০ হাজার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরমধ্যে অনেকে ওই কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কেউ কেউ সমাবেশের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে রাস্তায় রয়েছেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২৬ ও ২৭ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত ৮-১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার উদ্দেশে টাঙ্গাইল ছেড়েছেন।
এদিকে সমাবেশেকে কেন্দ্র করে ১০ জন বিএনপি’র নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের তল্লাশী চৌকি বসিয়ে বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশী চালাচ্ছে পুলিশের সদস্যরা।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলা থেকে ৪-৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে অংশ নেওয়ার দলীয় নির্দেশনা রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে জেলার ১২টি উপজেলা থেকে অধিকাংশ নেতাকর্মী ইতোমধ্যে ঢাকায় চলে গেছে। তারা ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছে। সূত্রটি জানায়, ইতোপূর্বের সমাবেশে যেতে বাধা ও মামলা-হামলা এবং গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কৌশলে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে। কেউ দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, প্রাইভেটকার ও ব্যক্তিগত গাড়িতে মহাসমাবেশে যাচ্ছেন। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতায় এবার অনেকেই হায়েচ ও মাইক্রোবাস এড়িয়ে চলছেন। সবাই শুক্রবারের (২৭ অক্টোবর) মধ্যে ঢাকায় পৌঁছবে।
এদিকে বিএনপি নেতারা দাবি করেন, ঢাকার মহাসমাবেশেকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়ক ও টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ তল্লাশি চৌকি স্থাপন করেছে। বিএনপির নেতারা জানায়, মহাসমাবেশ কর্মসূচির এক সপ্তাহ আগে থেকে সরকারি দল যে যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখাচ্ছে- এর উদ্দেশ্য ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে মহাসমাবেশে লোকসমাগম কমানো। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর চূড়ান্ত আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া- যাতে নির্বাচনের আগে বিএনপি আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ না পায়।
তারা জানায়, ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিতে এবার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ইউনিট থেকে নেতাকর্মীরা কয়েক দিন আগে থেকেই ঢাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। পুলিশি হয়রানি এড়াতে নানা কৌশলে বিভিন্ন যানবাহনে এবং বিভিন্ন রুটে তারা ঢাকায় ঢুকছেন।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল জানান, পুলিশ নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে, ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে যেতে নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশ তাদের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তারপরও সকল বাধা উপেক্ষা করে টাঙ্গাইলের অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে ঢাকার পথে রয়েছে। তিনিসহ ৩-৪ হাজার নেতাকর্মী এ রিপোর্ট লেখার সময় ঢাকার পথে রয়েছেন।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানবীর আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে কালিহাতীর ১ জন, দেলদুয়ারের ২ জন, মধুপুরের ২ জন, ধনবাড়ীর ২ জন, নাগরপুর উপজেলার ২ জন ও বাসাইল উপজেলার ১ জন রয়েছন। তাদেরকে গত বছরের নাশকতার মামলায় বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইল র্যাব-১৪, সিপিসি-৩ কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দিন মোহাম্মদ যোবায়ের বলেন, দেশে যেন কোন প্রকার নাশকতা না করতে পারে সেজন্য কালিহাতী উপজেলার ময়মনসিংহ রোডে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, বিএনপির (২৮ অক্টোবরের) মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ডাকাতি বন্ধে পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মধুপুর, এলেঙ্গা, গোড়াই ও হামিদপুরে চারটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনের ন্যায় নিয়মিত তল্লাশি করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল থেকে ২০ হাজার বিএনপি নেতাকর্মী যাচ্ছে মহাসমাবেশে
১৫৯ Views