টাঙ্গাইলে শবেবরাতে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
ইবাদত-বন্দেগি ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত। মহিমান্বিত এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল আছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে এশার নামাজের সময় টাঙ্গাইলের বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি রয়েছে চোখে পড়ার মতো। মসজিদগুলোতে নামাজের পর শুরু হয় শবে বরাতের নফল ইবাদত। এদিকে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে টাঙ্গাইলের কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে পুলিশ প্রশাসনও কঠোর নজরদারি রাখছেন।
হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাত শবে বরাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য খুলে দেন রহমতের দরজা। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’ বা সৌভাগ্যের রাত। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে মুসলিম উম্মাহ। শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়তে মাগরিবের নামাজের পর থেকে টাঙ্গাইল জেলা শহর ও উপজেলাসহ সর্বত্র মসজিদগুলোতে নামে মুসল্লিদের ঢল। এসব মসজিদে এশার নামাজের পর বিভিন্ন বয়ান করছেন মসজিদের খতিবরা। অনেকেই নফল নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও পাপ থেকে মুক্তির আশায় মুসল্লিরা মসজিদে মসজিদে স্রষ্টার ইবাদতে মশগুল হয়ে আছেন। কেউ জিকির-আযকার করছেন, কেউবা নফল নামাজ বা কুরআন তিলাওয়াত করছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অতীতের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের সামর্থ্য কামনা করে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছেন আর চোখের পানি ফেলছেন। আগামীতে যেন পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারেন সেজন্যও দোয়া করছেন তারা। শুধু মসজিদেই নয় বাসাবাড়িতেও অনেকে নফল নামাজ আদায়, জিকির, আসকার করছেন। অনেকে কবর জিয়ারত করছেন।
পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে মানুষ আসতে থাকেন। কেউ দলবেঁধে কেউবা সন্তানের হাত ধরে নামাজে আসেন। মসজিদে যাওয়ার পথে সোহেল রানা নামে একজন বলেন, ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি এটি বরকতের রজনী। অনেকেই ভাগ্যরজনী বলে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব পূর্বের ভুলের জন্য। একইসঙ্গে আল্লাহর কাছে রহমত বরকত চাইব। টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বাবার কবর জিয়ারত করতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, আট বছর আগে বাবা মারা গেছেন। আজকের রাতে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। তাই কবর জিয়ারত করতে এসেছি। আল্লাহ যেন বাবাকে মাফ করে দেন। নিকটজনদের সানিদ্ধ পেতে অনেকে কবরস্থানে যান এবং আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
এশার নামাজ শেষে ইমামরা লাইলাতুল বরাতের ফজিলত ও আমলের বিষয়ে বয়ান করেন। চারদিকের মসজিদের মাইকগুলো থেকে বয়ানের শব্দ ভেসে আসে। এশার আজান শুরুর আগেই মসজিদগুলোতে মুসল্লিতে ভরে যায়। এশার জামাতে মসজিদে জায়গা না পেয়ে ছাদে গিয়ে মুসল্লিদের এশার জামাতে শামিল হতে দেখা গেছে বহু মুসুল্লীকে। নামাজের পর থেকে অনেক মসজিদে শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেন ইমামগণেরা। বিভিন্ন মসজিদে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মিলাদ, ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনেক মসজিদে মুসল্লি ও মসজিদের পক্ষ থেকে মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়। পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরির প্রচলন রয়েছে। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়।

৪১ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *