মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মধুপুরের পীরগাছা ‘রাবার বাগান’

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল মধুপুর লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
বিগত ১৯৮৬ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পীরগাছা এলাকায় মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে পীরগাছা রাবার বাগান। এখানে তিন হাজার একর জায়গা জুড়ে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার রাবার গাছ রয়েছে। পীরগাছা রাবার বাগানে কাঁচা সবুজ রঙের পাতা, সুউচ্চ বৃক্ষের সারিতে ঠিক যেন স্কেল দিয়ে মেপে মেপে একই সমান্তরালে লাগানো গাছগুলো। যতদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। চারদিকে সবুজের সমারোহ। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। গাছগুলোর নাম রাবার গাছ।
মধুপুরের পীরগাছা রাবার বাগানের এই সৌন্দর্য অকৃত্রিম। দুই ধারে হাজারো গাছ আর এরই মাঝখানে সুবিশাল পথ। বাগানটির অন্যতম সৌন্দর্য হলো এটি একেক ঋতুতে একেক রকম সাজে সজ্জিত হয়। শীতকালে গাছের সব পাতা ঝরে গিয়ে যেমন রিক্ত হয়, তেমনি বর্ষায় ফিরে পায় নতুন যৌবন। চারদিকে নানা রঙের ফুলের গাছ, তারই মাঝে একটি আধাপাকা ভবন। গেস্টহাউসে অনুমতি সাপেক্ষে থাকার সুযোগও মেলে তাতে। রঙিন চালের ছাউনিতে গেস্টহাউসটি যেন প্রকৃতিরই একটা অংশ। বৃষ্টির দিনে মেলে বৃষ্টিবিলাসের সুযোগ। এমন বর্ষার দিনে এক কাপ চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। বাগানের প্রতিটি গাছের পাতা থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ার অপরূপ দৃশ্য আর টিনের গায়ে বৃষ্টি পড়ার শব্দ মিলে যেন ভিন্নধর্মী এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। আর বাগানে জোছনা রাতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এ সময় ভিন্ন রূপে সাজে বাগানের অপরূপ দৃশ্য।
অফিসের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে কিছুদূর এগিয়েই দেখা যায় সুবিশাল কারখানা, যেখানে রাবারশিট তৈরি করা হয়। সকালে দুধের মতো সাদা কাঁচা রাবার সংগ্রহ করে জমা করে রাখা হয় বড় বড় হাউসে। সেখান থেকে নানা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মেশিনের ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয় রাবারশিট। এই রাবারশিট শুকানো ও আগুনে তাপ দিয়ে লালচে ভাব না হওয়া পর্যন্ত তাপ দেওয়া হয়। প্রক্রিয়াগুলো সত্যিই অসাধারণ।
রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মধুপুর রাবার বাগানে সুউচ্চ গাছের সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে সোনালি রোদ উঁকি দিয়ে অকৃত্রিম সৌন্দর্যে ভরিয়ে তুলে চারপাশ। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সজ্জিত এই রাবার বাগানে আছে অসংখ্য ফল ও ফুলের গাছ। আর বাগানের মধ্য দিয়ে চলে গিছে বাগানের অফিসে যাওয়ার সুবিশাল রাস্তা। অফিসের পাশেই রয়েছে রঙ্গিন চালের ছাউনি ও রঙ্গিন ফুলের গাছ দিয়ে ঘেরা একটি আধাপাকা “গেস্ট হাউজ”। গেস্ট হাউজ থেকে বৃষ্টি কিংবা জ্যোৎস্নার দিনে রাবার বাগানের অপরূপ দৃশ্য দেখতে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে।
এখানে রাবার গাছ থেকে সাদা কাঁচা রাবার সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বড় বড় রাবার শিট বানানো হয়। আর কারখানার বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলো নিজের চোখে দেখা নিঃসন্দেহে দারুণ এক অভিজ্ঞতা। এছাড়া পীরগাছা রাবার বাগানের মাঝামাঝি ও শেষ প্রান্তে আছে গারো আদিবাসীদের বসতি এবং নানান রকম বন্যপ্রানীর আবাস মধুপুরের গড়। মধুপুর থেকে রাবার বাগানের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। সিএনজি বা অটোরিকশায় মধুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রাবার বাগানে যাওয়া যায়। আর পুরো বাগান মোটরসাইকেলে ঘুরে দেখার জন্য জনপ্রতি ৩০০-৬০০ টাকা খরচ হবে। পীরগাছা রাবার বাগানের গেস্ট হাউজে অনুমতিক্রমে রাতে থাকা যায়।

 

 

৪৫ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *