
স্টাফ রিপোর্টার ॥
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল আছে কিছু নতুন, কিছু পুরাতন। তারা জনগনকে বোঝাতে চেষ্টা করছে বিএনপি নাকি সংস্কার চায় না। সংস্কার কী? খায় না মাথায় দেয়। বাংলাদেশে সকল কল্যাণকর সংস্কার করেছে বিএনপি। তিনি বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তার পুরোটাই সংস্কার কর্মসূচি। সংস্কারের প্রত্যেকটা বিষয় ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে।
তিনি রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সদ্য কারামুক্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আব্দুস সালাম পিন্টু উচ্চ আদালতের রায়ে মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা লড়াই করেছে। এখনও লড়াই শেষ হয়ে যায় নাই। লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকের কারাগারে বা গুম অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। ৫ আগস্ট আমি জেলখানায় ছিলাম। আমাদের ৫১৮ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে ছিল। অনেক লড়াই, সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার পর দেশে পরিবর্তন এসেছে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র এখনও পুনঃ প্রতিষ্ঠা হয় নাই। গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা হয় না। গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেজন্য বলি সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। বলি নাই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। যারা জয়লাভ করবে, তারাই সরকার গঠন করবে।
তিনি বলেন, আব্দুস সালাম পিন্টু মৃত্যুদন্ডের আদেশ মাথায় নিয়ে কারাগাওে অনিশ্চিত জীবন কাটিয়েছেন। শতশত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে। আপনারা এমন কিছু করবেন না যেন বিএনপির বদনাম হয়। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে যদি কেউ অত্যাচার-নির্যাতন করে তার ফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে। কারও কারণে যদি আমাদের বদনাম হয় তিনি আমাদের দলের কেউ নয়।
সংবর্ধনার জবাবে আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, স্বৈরাচারী সরকার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাকে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। এক রাতে সারা রাত নির্যাতন করা হয়েছিল। সকালে আমাকে অর্ধমৃত অবস্থায় আমাকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। ৫ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অনেকে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছে। ১৮ সাল থেকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল। সেখানেও নিপিড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিবারের কারও সাথে দেখা করতে দেওয়া হয় নাই। তিনি বলেন, আজ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদী দল গড়তে চাই।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকার আমাকে ফাঁসি দিয়েছিল। কোন দিন ভাবি নাই আপনাদের মাঝে ফিরে আসব। টাঙ্গাইলের মানুষের দেখা পাব। আমার পরিবার আমাকে ফিরে পাবে। আজ যে সালাম পিন্টু বেঁচে আছে তা শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আশির্বাদ।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ সোরহাব, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর আব্দুস সালাম পিন্টু নিজ জেলা টাঙ্গাইলে পৌছলে শহরের প্রবেশদ্বার নগর জলফৈ এলাকায় তাকে নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। বিকেলে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত সংবর্ধনাস্থলে তাকে দেখতে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ঢল নামে।