চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানীর ঘটনায় দুই ভাইসহ তিনজন রিমান্ডে

আইন আদালত টাঙ্গাইল মির্জাপুর লিড নিউজ

আদালত সংবাদদাতা ॥
রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানীর ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদের মধ্যে আসামী আলমগীর শেখ (৩৪) ছয় দিনের এবং তার আপনভাই রাজিব হোসেন শেখকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ রুমি খাতুন শুনানী শেষে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ দুই জনকে তাদের হেফাজতে নেয়।
এদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত শহিদুল ইসলামকে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আবারও ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গোয়েন্দা পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে মির্জাপুর আমলি আদালতে হাজির করে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট মোসাম্মৎ রুমি খাতুন ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তারকৃত অপর দুইজন মোঃ সবুজ ও শরিফুজ্জামান ওই দিনই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তার টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছে। ডাকাতি ও শ্লীলতাহানীর ঘটনায় মোট ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহসানুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃত দুই ভাই ঢাকার আশুলিয়ার ধানশোনা এলাকার পলাশবাড়ী এলাকায় থাকত। তারা মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলী গ্রামের খোরশেদ আলম শেখের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, প্রথম দফা ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে শহিদুল ইসলাম ওরফে মুহিদুল ওরফে মুহিত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ডাকাত চক্রের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রিমান্ডে আনা এই মামলার অপর আসামী আলমগীর শেখের সামনে মুখোমুখি করে শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাই দ্বিতীয় দফা রিমান্ড চাওয়া হয়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে জানান, আলমগীর হোসেনকে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সাধুরপারা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আন্তঃ জেলা ডাকাত দলের ‘মাষ্টার মাইন্ড’।
এর আগে এই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মুহিত টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ি সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে বাস ডাকাতিকালে লুন্ঠিত নগদ চার হাজার ২১০ টাকা, দুইটি রুপার আংটি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলমগীর পুলিশকে জানায়, ডাকাতিকালে লুন্ঠিত মুঠোফোন সেট, গহনা ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ছুড়ি তার ছোট ভাই রাজিবের কাছে রয়েছে। পরে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আলমগীরকে সাথে নিয়ে আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে রাজিব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ডাকাতিকালে লুন্ঠিত ১০টি মুঠোফোন সেট, নারী যাত্রীদের এ্যামিটেশনের গহনা, তিনটি ব্যাগ, ৩ জন যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত ২টি ছুরি উদ্ধার করা হয়। আলমগীরের বিরুদ্ধে ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে ইউনিক রোড রয়েলসের আমরি ট্রাভেলস নামক বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে ৩০/৩৫ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রীবেশী ৮/৯ জন ডাকাত অস্ত্রের মুখে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকাপয়সা, মালামাল লুন্ঠন করে। এ সময় তারা নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করে। ঘটনার তিনদিন পর গত (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও মির্জাপুর থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করে দেন। ওই দিনই টিমের সদস্যরা ডাকাতদের সন্ধানে মাঠে নামে। গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) গোয়েন্দা পুলিশ সাভারের গেন্ডা এলাকা থেকে শহিদুল ইসলাম, মোঃ সবুজ ও শরীফুজ্জামান শরীফ নামক ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।

 

 

 

 

 

 

১২ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *