
হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠক সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের টাঙ্গাইল শহরের বাড়ি দখল করে “পাগলের আশ্রম” চালু করেছেন। শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে টাঙ্গাইল শহরের ছোট কালীবাড়ি এলাকায় ছয়তলা ভবন দখল করে সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি প্রায় ২৫ জন ছিন্নমূল মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এই আশ্রম চালু করা হয়।
আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি শনিবার (৮ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ২৫ জন ছিন্নমূল মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ নিয়ে প্রবেশ করে। এ সময় জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়িতে কেউ ছিলেন না।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন লোকদের নিচতলা এবং তৃতীয় তলায় উঠানো হয়। বিকেল ৩টার দিকে সরেজমিন শহরের আকুরটাকুর ছোট কালিবাড়ী এলাকায় জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়তলা ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন বয়সের ১১ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ অবস্থান করছেন। আরও লোকজন রয়েছেন ভবনটির তৃতীয় তলায়। সেখানে অবস্থান করছিলেন মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি। তিনি বলেন, তার এই আশ্রমটি সদর উপজেলার খেজুরতলা এলাকায় ছিল। শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়িতে এটি স্থানান্তর করা হলো। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতারা জনগনের টাকা লুটপাট করে বাড়িঘরসহ এসব সম্পদ করেছিল। তাই এগুলো এখন জনকল্যানে ব্যবহার করা হবে। গত (৬ ফেব্রুয়ারি) মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টির নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর করা হয়।
দুইদিন আগে ফেসবুকে পূর্বঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সকল নেতাদের বাড়িতে পাগলদের জন্য ‘আশ্রম’ গড়ে তোলা হবে। তারই অংশ হিসেবে শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে তালা ভেঙে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের ছয়তলা ভবনে প্রবেশ করা হয়েছে। ওই বাসায় আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের ২৫ জন পাগল রাখা হয়েছে। দুইদিন আগে মারইয়াম মুকাদ্দাস ওরফে মিষ্টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসা “পাগলের আশ্রম”, প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খানের বাসা “প্রতিবন্ধিদের আশ্রম”, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বাসা “অ্যানিমেল শেল্টার”, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেলের বাসা “বৃদ্ধ আশ্রম”, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বাসা “এতিমখানা” এবং আওয়ামী লীগ অফিস “পাবলিক টয়লেট” করা হবে। সেখানে তিনি লিখেছিলেন ‘আরও নাম সাজেস্ট করুন, তথ্য দিন। এক এক করে সামাজের ও টাঙ্গাইলের উন্নয়নের কাজে লাগুক আওয়ামী লীগের অবৈধ সম্পদ।’
তিনি আরও জানান, এটাকে জবরদখল বলা যাবে না। কারণ কোনো ব্যক্তি বিশেষের ব্যবহারের জন্য ভবনটি নেওয়া হয়নি। সমাজের অবহেলিত পাগলদের জন্য আশ্রম করা হচ্ছে। এটাকে অন্য সমন্বয়করা তাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি জানান, জোয়াহেরুল ইসলামের পক্ষ থেকে একজন লোক এসে জানায় ‘বাসা না ভেঙে সেখানে যেন আশ্রম করা হয়’। তার প্রস্তাব অনুযায়ী পাগলদের আশ্রমই তৈরি করা হয়েছে। তবে একথা কে বলেছে তার নাম-পরিচয় বলতে পারেননি সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি। আবাসিক এলাকায় পাগলের আশ্রম তৈরি করায় স্থানীয়রা অস্বস্তি প্রকাশ করলেও তারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি জানান, আবাসিক এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় যদি পাগলদের কোনো প্রভাব পড়ে তাহলে যারা বেশি পাগল তাদেরকে অন্যকোনো আওয়ামী লীগের নেতার বাসায় স্থানান্তর করে কম পাগলদের এখানে রাখা হবে।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল শাখার সদস্য সচিব আবু আহমেদ শেরশাহ বলেন, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে নেই। উনার কোন কর্মের দায় আমরা নেব না। আন্দোলনের সময় অনেকেই সক্রিয় ছিল।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল জেলা শাখার আহবায়ক আলামিন জানান, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামক একজন নারী ছাত্র প্রতিনিধি তথা সমন্বয়ক পরিচয়ে জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় পাগলের আশ্রম করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তারা এটাকে কোনভাবেই সমর্থন করেন না। তাছাড়া মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিল- তাই বলে তিনি বিশেষ সুবিধা নেবেন এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। বর্তমানে কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিতে পারবে না। কারো বাড়ি দখল করার কোন কার্যক্রম তারা হাতে নেননি। যে কেউ এ রকম কাজ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিষয়ে আমি অবগত নই। এবং আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আমার সহযোদ্ধারাও অবগত নয়। তার কর্মকান্ডের প্রতি আমার কোন ধরনের সমর্থন নেই।
গত (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জোয়াহেরুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ অর্ধডজন মামলা হয়েছে। তার বাড়ি দখলের বিষয়ে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তার মেয়ে ডা. জাকিয়া ইসলাম জানান, ঘটনার সময় তাদের বাড়িতে কেউ ছিল না। তাদের পরিবারের প্রায় সবার নামেই মামলা থাকায় বাড়িতে থাকছেন না। তিনি বলেন, দেশে আইন নাই, প্রশাসন নাই, তাই এমন অরাজকতা হচ্ছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহম্মেদ জানান, এ বিষয়ে তার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তিনি লোকমুখে শুনেছেন।