
আদালত সংবাদদাতা ॥
টাঙ্গাইলে নারী সমন্বয়ক ও ছাত্র প্রতিনিধি মারইয়াম মোকাদ্দেস মিষ্টিকে (২৭) চার দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১০ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোলাম মাহবুব খান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের বাসা ভাঙচুর, লুটপাট, দখল ও ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি এবং মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়ে “পাগলের আশ্রম” বানানোসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ধারী মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টিকে রবিবার (৯ মার্চ) রাত ১২টার দিকে শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়া (হাউজিং) এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ।
টাঙ্গাইল আদালতের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ লুৎফর রহমান রিমাণ্ডের বিষয়ে জানান, সোমবার (১০ মার্চ) সকালে নারী সমন্বয়ক মারইয়াম মোকাদ্দেস মিষ্টিকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় সদর থানা পুলিশ। পরে আদালতের বিচারক শুনানি শেষে চার দিনের রিমাণ্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খান (৫৮) রবিবার (৯ মার্চ) রাত ১১টায় টাঙ্গাইল সদর থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল শহরের ছোট কালীবাড়ি রোডে বাদির ভবনের কলাপসেবুল গেটের ষষ্ঠ তালা ভেঙে গ্রেপ্তারকৃত বিবাদিসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৮-৯ জন ৫ লাখ টাকা এবং ১০ ভরি স্বর্ণালংকার (যার মূল্য অনুমান ১২ লাখ টাকা) চুরি করে নিয়ে গেছে। এছাড়াও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ নিয়ে তালা ভেঙে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে রুমে প্রবেশ করায়। এ বিষয়ে বিবাদির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি রেগে গিয়ে বাদিকে বলেন, এই বাড়িতে বসবাস করতে হলে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় আগামী সাতদিনের মধ্যে বাড়িটি পুড়িয়ে ফেলা হবে। এ ঘটনায় রবিবার (৯ মার্চ) রাতে সাবেক এমপির স্ত্রী রওশন আরা খান বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় মিষ্টিকে এক নম্বর আসামি ও অজ্ঞাত আরও সাত থেকে নয় জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়ে সাবেক এমপির বাড়ি দখল করে নারী সমন্বয়ক মারইয়াম মোকাদ্দেস মিষ্টি। পরে যৌথবাহিনীর অভিযানে শনিবার (৮ মার্চ) রাতে বাড়িটি দখলমুক্ত করে। এরপর প্রশাসন তার কাছে মুচলেকা নিয়ে মিষ্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
মানসিক ভারসাম্যহীনদের বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন শরীফ জানান, রবিবার (৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জনকে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের সরকারি আশ্রমে পাঠানো হয়েছে। নারী মানসিক ভারসাম্যহীনদের গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি মানসিক ভারসাম্যহীন আশ্রমে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পুরুষ যারা রয়েছেন সরকারিভাবে তাঁদের ময়মনসিংহ মানসিক ভারসাম্যহীন আশ্রমে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মেদ জানান, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, দখল ও চাঁদাদাবীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। পরে একটি পুলিশের একটি দল আসামি মারইয়াম মোকাদ্দেস মিষ্টিকে (২৭) রাত ১২টার দিকে শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়া (হাউজিং) এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ বিষয়ে অন্যান্য আসামিদের শনাক্তসহ গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জোয়াহেরুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ অর্ধডজন মামলা হয়েছে। মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বাসাইল উপজেলা যশিহাটি গ্রামের মাজহারুল ইসলামের মেয়ে। শাহ আলমাস ও মিষ্টি দম্পতির ঘরে এক সন্তান রয়েছে। এর আগে গত (৬ ফেব্রুয়ারি) তার নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগ অফিস বুলডোজার দিয়ে ভাংচুরের নেতৃত্ব দেন এই সমন্বয়ক মিষ্টি।
ঘটনার দুইদিন আগে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসা “পাগলের আশ্রম”, প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খানের বাসা “প্রতিবন্ধিদের আশ্রম”, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বাসা “অ্যানিমেল শেল্টার”, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেলের বাসা “বৃদ্ধ আশ্রম”, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বাসা “এতিমখানা” এবং আওয়ামী লীগ অফিস “পাবলিক টয়লেট” করা হবে। সেখানে তিনি লিখেছিলেন ‘আরও নাম সাজেস্ট করুন, তথ্য দিন। এক এক করে সামাজের ও টাঙ্গাইলের উন্নয়নের কাজে লাগুক আওয়ামী লীগের অবৈধ সম্পদ।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল শাখার সদস্য সচিব আবু আহমেদ শেরশাহ বলেন, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে নেই। উনার কোন কর্মের দায় আমরা নেব না। আন্দোলনের সময় অনেকেই সক্রিয় ছিল।