টাঙ্গাইলের ১১টি পৌরসভায় ভাগার নেই ॥ বর্জ্য ফেলে সড়কের পাশে

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল লিড নিউজ

জাহিদ হাসান ॥
টাঙ্গাইলের ১১টি পৌরসভায় নয় লাখের বেশি লোক বাস করে। প্রতিদিন এই পৌরসভাগুলোতে ২৫০ টনের বেশি গৃহস্থালি ও অন্যান্য বর্জ্য তৈরি হয়। কিন্তু সেসব পৌরসভাগুলোর একটিতেও নিজস্ব ভাগার নেই। ফলে পৌরসভার কর্তৃপক্ষ এসব বর্জ্য সড়কের পাশে খোলা জায়গায়, খাল ডোবায় ফেলছে। এমনকি মধুপুরের বনেও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগও নেই পৌরসভা কর্তৃপক্ষগুলোর। দিনের পর দিন এভাবে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষরা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, পৌরসভার নিজস্ব জায়গা না থাকায় ভাগাড় করা যাচ্ছে না। ভাগাড় তৈরির জন্য জমি কেনার মতো আর্থিক সচ্ছলতাও পৌরসভাগুলোর নেই। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ অনুযায়ী, পৌরসভার দায়িত্বের তিন নম্বরে রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। আইন অনুযায়ী, নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পৌরসভার। পৌরসভার নিজস্ব কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও এই কাজ স্থগিত করা যাবে না। আর কোন পৌরসভা এই কাজ না করলে মন্ত্রণালয় প্রয়োনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইল অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা সোমনার্থ লাহিড়ী টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, এভাবে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন বিরোধী কাজ। পৌরসভার অন্যতম কাজ হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা।
কিন্তু এভাবে আবর্জনা ফেলে পৌরসভা পরিবেশ আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী কাজ করছে। জেলার সবচেয়ে পুরনো পৌরসভা টাঙ্গাইল সদর। ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৭ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৯ দশমিক ৪৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় প্রায় ৪ লাখ লোকের বসবাস। এতো পুরনো এই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা তো দূরের কথা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ভাগাড় নির্মাণ করা হয়নি এখনো। শহরের সব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন সড়কের পাশে। পৌরসভা সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ডের সম্পূর্ণ এবং ৩টি ওয়ার্ডের আংশিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাকি ৫টি ওয়ার্ড বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনার বাইরে। টাঙ্গাইল পৌরসভায় গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে পৌরসভা ৫০ থেকে ৫৫ টন বর্জ্য অপসারণ করতে পারে। বর্তমানে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে উত্তর দিক দিয়ে শহরের প্রবেশমুখে রাবনা এলাকার টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে। আর দক্ষিণ অংশের ময়লা ফেলা হতো শহরের আরেক প্রবেশমুখ কাগমারী বেবিস্ট্যান্ড এলাকায়। দিনের পর দিন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষ ও পথচারীদের দুর্গন্ধের মধ্যে চলতে হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, বিগত ২০০৪ সাল থেকে ভাগাড় নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আধুনিক ভাগাড় নির্মাণের জন্য শহর বাইপাস রাবনা এলাকায় জমি চিহিৃত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের আওতায় জমি ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কালিহাতী পৌরসভা ১৯৯৮ সালে গঠিত হয়। প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার পৌরসভার ময়লা ফেলা হয় সড়কের পাশে। এই পৌরসভায় দাতা সংস্থা জাপান সরকারের ইন্টারন্যাশনাল কোঅপরাশেন এজেন্সির (জাইকা) আর্থয়নে একটি প্রকল্প চলছে। সম্প্রতি নর্দান বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপেমেন্ট শীর্ষক এই প্রকল্পের টাকায় ময়লার ভাগাড় করতে ৪ একর জায়গা কিনছে পৌরসভাটি। ভূঞাপুর পৌরসভার সংগ্রহ করা বর্জ্য পরিত্যক্ত জমি সড়কের পাশের ফাঁকা জায়গায় ফেলছে। পৌরসভার মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, পৌরসভা তো নিরুপায় নিজের জায়গা নেই। যেখানে ফাঁকা জায়গা পাচ্ছে সেখানেই ফেলা হচ্ছে। ময়লা ভাগাড়ের জন্য জমি ক্রয় ও নির্মাণ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
মধুপুর পৌরসভার বাসিন্দা ৬০ হাজারের উপরে। পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খানের ভাষ্য প্রতিদিন কয়েক টন বর্জ্য হয়। কিন্তু পৌরসভায় বর্জ্য ফেলার কোন জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে পৌরসভার ট্রাকে করে ১০ কিলোমিটার দূরের মধুপুরের বনের ভেতরে এসব বর্জ্য ফেলে আসতে হয়। ঘাটাইল পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ মিয়া টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলা ছাড়া আর কোনো বিকল্প উপায় নেই। বর্জ্য ফেলার ভাগাড় না থাকায় প্রায় একই চিত্র সখীপুর, মির্জাপুর, ধনবাড়ী, বাসাইল, এলেঙ্গা ও গোপালপুর পৌরসভাগুলোতে।
এ বিষয়ে নগরবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহসভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সংশ্লিষ্টরা সেটার তাৎপর্য এখানে বুঝতে পারছেন না। তারা অন্য অবকাঠামো নির্মাণকেই বেশি গুরুত্ব দেন। টেকসই নগড় গড়তে হলে যত দ্রুত সম্ভব আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। এটা প্রতিটি পৌরসভার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।

 

 

১৯৭ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *