
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন পক্ষকে পাশে পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের বড় একটি অংশও তাঁর জন্য মাঠে নেমেছে। তাঁর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন বলে মনে করছেন ভোটাররা। মীর এনায়েতে হোসেন মন্টু উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের টানা পাঁচবার এবং উপজেলা পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। তিনি গত ২৭ নভেম্বর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর মারা যান। তার মৃত্যুও পর ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি উপনির্বাচনে খান আহমেদ শুভ নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, প্রায় দুই বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে খান আহমেদ শুভর সঙ্গে দলের অনেক কর্মী-সমর্থকের দূরত্ব তৈরি হয়। কিছু নেতা-কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা রয়েছেন। এ কারণেই এবার তাঁর আসনে ৯ নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত খান আহমেদ শুভ মনোনয়ন পেলেও দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ঘোচেনি। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুকে (ট্রাক) সমর্থন দিয়েছেন। ফলে মন্টু নির্বাচনী মাঠে প্রভাব ফেলতে পেরেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) এ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহিরও স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। জাতীয় পার্টিও নেতাকর্মীরা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সরব হয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাকের পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী থাকলেও এ আসনে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস দেখছেন ভোটাররা।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিপাড়া এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মন্টুর পক্ষে সমর্থকরা পথসভার আয়োজন করে। এতে মাঝিপাড়ার লোকজন ওই পথসভায় অংশ নিতে না পারে সেজন্য নৌকার স্থানীয় সমর্থক বজলু, লাজলু, মিনহাজসহ কয়েকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত অভিযোগ করেন। এ নিয়ে মাঝিপাড়ার মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) নির্বাচনী এলাকার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচন বর্জন করছে। বিএনপির কিছু নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান নৌকার পক্ষে অগ্রহ দেখাচ্ছেন। পাশাপাশি উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান মন্টুকে সমর্থন দিয়েছেন। এমনকি তাঁর পক্ষে কেন্দ্রে ভোটার টানতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে সরব।
পৌরসভা, লতিফপুর, গোড়াই ও জামুর্কী ইউনিয়নের কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, হিন্দু ও কারিগড় সম্প্রদায়ের ভোট সর্বদা নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখে। বিগত নির্বাচনগুলোতে তারা প্রয়াত একাব্বর হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন। এবার তাদের বড় একটি অংশ মন্টুকে সমর্থন দিতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থক যাঁরা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করছেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইবিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মধুমতি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক রাফিউর রহমান ইফসুফজাই সানি বলেন, আমরা ৯ জন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এদের পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্টুকে সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা নিয়মিত খেলোয়ার। আমরা মির্জাপুরের ঘরের সন্তান। যিনি নৌকা নিয়ে এসেছেন তিনি মির্জাপুরের ভোটাররা না। আমরা ভাড়া করা খেলোয়ার না। মির্জাপুরবাসী খেলতে জানে। আগামী ৭ জানুয়ারি মির্জাপুরের ভোটাররা গোল দেবে মাদকের বিরুদ্ধে, গোল দেবে বেয়াদবের বিরুদ্ধে, গোল দেবে কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে, সমর্থন দিবে উন্নয়নের পক্ষে, গোল দিবে নেতাকর্মীদের সম্মানের পক্ষে। আগামী ৭ জানুয়ারি মির্জাপুরবাসী স্বতন্ত্র প্রার্থী মন্টুকে ট্রাক প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
এ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিস্টেম চালু করেছেন, তাতে ভোট এবং ঘোষণা দিয়ে ফলাফল পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনী কোন জোট নেই। তবে আসন ভিত্তিক আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির সমঝোতা হয়েছে। টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে জানান।