
হাসান সিকদার ॥
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল জেলার আটটি সংসদীয় আসনে এবার মোট ৫৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আটটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ৫টিতে এবং স্বতন্ত্র ৩টিতে জয়লাভ করেছে। এর মধ্যে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪০ জন প্রার্থীর। গত রবিবার (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে রাতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম আটটি আসনের প্রার্থীদের বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ১ লাখ ৭৪ হাজার ১২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৩ প্রার্থীর। এরা হলেন- স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী ৪ হাজার ১৭৮ ভোট পেয়ে খন্দকার আনোয়ারুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) প্রতীকের প্রার্থী এক হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে ফারুক আহাম্মেদ, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী ৩ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে মোহাম্মদ আলী।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোপালপুর উপজেলা পরিষদের পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ৩০ হাজার ৪৮৬ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪ প্রার্থীর। এরা হলেন- জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) মনোনীত প্রার্থী ৪০২ ভোট পেয়ে হুমায়ুন কবির তালুকদার, গণফ্রন্টের (মাছ) প্রতীকের প্রার্থী ৩১২ ভোট পেয়ে গোলাম সারোয়ার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) প্রতীকের প্রার্থী ৪৫১ ভোট পেয়ে রেজাউল করিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (আম মার্কা) প্রতীকের প্রার্থী ৩০৫ ভোট পেয়ে সাইফুল ইসলাম।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থী ও সাবেক দুইবারের এমপি আমানুর রহমান খান রানা ৮২ হাজার ৭৪৮ পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ৬৯ হাজার ৩৫ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪ প্রার্থীর। এরা হলেন- জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী ৭৮৮ ভোট পেয়ে আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম-নোঙ্গর) প্রতীকের প্রার্থী ১৫০০ ভোট পেয়ে জাকির হোসেন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (চাকা) প্রতীকের প্রার্থী ২৩৪ ভোট পেয়ে সাখাওয়াত খান সৈকত, ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি (আম) প্রতীকের প্রার্থী ২৫২ ভোট পেয়ে হাসান আল মামুন সোহাগ।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী ও কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ৫৪ হাজার ৭৫ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৭ প্রার্থীর। এরা হলেন- স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থী ১০ হাজার ৭৮৭ ভোট পেয়ে সাখাওয়াত সিরাজ শুক্লা, জাসদ (মশাল) প্রতীকের প্রার্থী ২০৩ ভোট পেয়ে এসএম আবু মোস্তফা, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) প্রতীকের প্রার্থী ২৬১ ভোট পেয়ে মোন্তাজ আলী, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী ৫০৩ ভোট পেয়ে লিয়াকত আলী, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) প্রতীকের প্রার্থী ১৩৬ ভোট পেয়ে শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) প্রতীকের প্রার্থী ১০৩ ভোট পেয়ে শুকুর মামুদ, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) প্রতীকের প্রার্থী ১৪৭ ভোট পেয়ে সাদেক সিদ্দিকী।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান এমপি ছানোয়ার হোসেন ৭২ হাজার ২৭৬ পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট মামুন অর রশিদ ৬৫ হাজার ৮৬৭ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৬ প্রার্থীর। এরা হলেন- জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী ৫ হাজার ১৯১ ভোট পেয়ে মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম-নোঙ্গর) প্রতীকের প্রার্থী ৬৫৭ ভোট পেয়ে তৌহিদুর রহমান চাকলাদার, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) প্রতীকের প্রার্থী ৩১৪ ভোট পেয়ে শরিফুজ্জামান খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) প্রতীকের প্রার্থী ১ হাজার ৫৪ ভোট পেয়ে হাসরত খান ভাসানী, স্বতন্ত্র (কেটলি) প্রতীকের প্রার্থী ১ হাজার ৫৮৪ ভোট পেয়ে খন্দকার আহসান হাবিব, স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী ৯৭ ভোট পেয়ে জামিলুর রহমান মিরন। তবে মিরন প্রতীক বরাদ্দের দিনই নৌকা প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান।
টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু ১ লাখ ১২ হাজার ৬৮৪ পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি তারেক শামস খান হিমু ৩১ হাজার ২৯২ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৬ প্রার্থীর। এরা হলেন- বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) প্রতীকের প্রার্থী ১২৪ ভোট পেয়ে আব্দুল করিম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম- নোঙ্গর) প্রতীকের প্রার্থী ১ হাজার ৪৮২ ভোট পেয়ে খন্দকার ওয়াহিদ মুরাদ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) প্রতীকের প্রার্থী ১৮৯ ভোট পেয়ে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী ৬ হাজার ৫৫৬ ভোট পেয়ে মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী ৬ হাজার ৬২৫ ভোট পেয়ে আবুল কাশেম ও স্বতন্ত্র (বাঁশি) প্রতীকের প্রার্থী ৫৮০ ভোট পেয়ে সৈয়দ মাহমুদুল ইলাহ্।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি খান আহমেদ শুভ ৮৮ হাজার ৩৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু পেয়েছেন ৫৭ হাজার ২৩১ ভোট। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৬ প্রার্থীর। এরা হলেন- বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ী) প্রতীকের প্রার্থী ২৬৫ ভোট পেয়ে গোলাম নওজব চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) প্রতীকের প্রার্থী ১ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে আরমান হোসেন তালুকদার, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী ৩৬৮ ভোট পেয়ে জহিরুল ইসলাম জহির, জাসদ (মশাল) প্রতীকের প্রার্থী ১৫৩ ভোট পেয়ে মঞ্জুর রহমান মজনু, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) প্রতীকের প্রার্থী ৫১২ ভোট পেয়ে মোক্তার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) প্রতীকের প্রার্থী ১০৫ ভোট পেয়ে রুপা রায় চৌধুরী।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অনুপম শাজাহান জয় ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের (গামছা) প্রতীকের প্রার্থী ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট। এ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪ প্রার্থীর। এরা হলেন- জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) প্রতীকের প্রার্থী ৪৬৯ ভোট পেয়ে রেজাউল করিম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) প্রতীকের প্রার্থী ২১৭ ভোট পেয়ে আবুল হাশেম, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) প্রতীকের প্রার্থী ৫৬৯ ভোট পেয়ে পারুল, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) প্রতীকের প্রার্থী ১০৯ ভোট পেয়ে মোস্তফা কামাল।
টাঙ্গাইলের আটটি আসনে ১২টি উপজেলার ১১টি পৌরসভা ও ১২০টি ইউনিয়ন এবং একটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ১ হাজার ৫৬টি কেন্দ্রের ৬ হাজার ৮১০টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জেলার ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭২ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৩ আর নারী ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯ জন। এছাড়া ২০ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।