জাহিদ হাসান ॥
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। আচরণবিধি ভঙ্গের ভয়ে পোষ্টার ও মাইকিং করা ছাড়া প্রকাশ্যে গাড়ীর বহর ও শতাধিক মোটরসাইকেলের মাধ্যমে চলছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। প্রার্থীদের প্রচারের পাশাপাশি চলছে নীরব গণসংযোগ। প্রার্থী হিসেবে অবস্থান জোরদার করতে ভোটারদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের সমর্থন পেতে বিরামহীন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন হেভিওয়েট ও শক্তিশালী প্রার্থীরা। ভোট টানার কৌশল নিয়ে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
জানা যায়, নির্বাচন আইনে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রকাশ্যে প্রচার চালানো যায় না। নির্বাচনের তফসিল অনুসারে আগামী (১৮ ডিসেম্বর) প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। ওই দিন থেকে আগামী (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আগামী (৭ জানুয়ারি)। কিন্তু প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেই বিভিন্ন কৌশলে ব্যাপকহারে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এলাকার প্রভাবশালী ও জ্ঞানী-গুনি লোকদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান, হাটবাজারে গিয়ে গণসংযোগ, বাড়িতে উঠান বৈঠক ও আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর বাসায় বাসায় গিয়ে বহু দামি দামি গাড়ী ও শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে গণসংযোগ করছেন। এছাড়া প্রার্থী নিজে ও ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সামাজিক মাধ্যমে কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন।
বিএনপি নির্বাচনে না এলেও প্রায় প্রতিটি আসনেই এবার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বড় দলের প্রার্থীদেরও স্বস্তি নেই। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছে ৫৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। প্রায় আসনেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীর সঙ্গে জমজমাট লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এ কারণে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে চাপ থাকায় এবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাশাপাশি সরকারের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আগে থেকেই অধিকতর তৎপর। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে নির্বাচন কশিমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইউএনও ও ওসিদের বদলি করেছে। নির্বাচন কমিশন সংশি¬ষ্ট সকল কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও সতর্ক করেছে ইসি। কোনো অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসি। এ পরিস্থিতিতে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরাও সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজ নিজ কৌশলে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। কে কার চেয়ে কৌশলে এগিয়ে থেকে নিজের ভোটব্যাংক বাড়াতে পারে, সেজন্য আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে প্রচারণার প্রতিযোগিতা। এ কারণে দিনরাত দৌড়ঝাঁপ করছেন তারা। বিশেষ করে যেসব আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে, সেখানের প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বেশি করতে হচ্ছে বলে জানা যায়। বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিটি আসনের এমন প্রার্থীরা সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত ভোট ব্যাংক বাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদরসহ কালিহাতী, ঘাটাইল, বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশলে গণসংযোগ শুরু করেছেন। পাশাপাশি তাদের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মী ও স্বজনরা পাড়া-মহল¬ায় প্রতিদিনই দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছেন। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে একেক দিন একক পাড়া-মহল্লায় গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তবে প্রচারণায় এখনো পর্যন্ত এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চলছে। তবে নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধি ভঙ্গের ভয়ে তারা কোথাও নিরবে আবার কোথাও ব্যাপক আওয়াজ তুলে প্রচার চালাচ্ছেন।
এদিকে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে টাঙ্গাইল ও উপজেলা শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ছুটে যাচ্ছেন ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে। আবার শহরে প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে তাদের স্বজনরা গ্রাম থেকে ছুটে আসছেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেক প্রবাসী স্বজনদের পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসছেন বলেও খবর রয়েছে। ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনেই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহর ও গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে চায়ের দোকান ও রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সর্বত্র আড্ডা জমে উঠেছে। এসব আড্ডায় আলোচনায় প্রধান্য পাচ্ছে কে কোন আসনের প্রার্থী, প্রার্থীর ব্যক্তিগত দোষ-গুণ এবং কার অবস্থান কার চেয়ে ভালো।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল আগেই নানামুখী প্রশ্ন তোলায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আগেভাগেই তৎপর হয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এ নির্বাচনকে জমজমাট করতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে। আর এ কারণেই এবার আগেভাগেই জমে উঠে নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন গত (১৫ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুসারে গত (৩০ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাছাই গত (৪ ডিসেম্বর) শেষ হয়েছে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী (১৭ ডিসেম্বর)। এরপর দিন আগামী (১৮ ডিসেম্বর) প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রচার চালাতে পারবে (১৮ ডিসেম্বর) থেকে (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত।
এদিকে এবার জমজমাট সংসদ নির্বাচনের আয়োজন হলেও বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অংশ নেয়নি। অভিজ্ঞ মহলের মতে রাজপথে এক দফার দাবি আদায় না হওয়া ও সংসদ নির্বাচনে না আসার কারণে দলটি ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়তে পারে। তাই বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত ছিল। যেমন ভুল করেছিল বিগত ২০১৪ সালে। এবারও তেমন ভুল করলো বিএনপি।
টাঙ্গাইলের ৮টি আসনে চলছে নিরব গণসংযোগ ॥ ভোট টানতে ব্যস্ত প্রার্থীরা
২১৫ Views