স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
তিন গৃহবধূর গোসলের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন দুই লম্পট। এ নিয়ে ভূক্তভোগীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সেই সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও সামাজিকভাবে কোনঠাসা হয়ে রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের খাটিয়ারহাট টান পলাশতলী গ্রামে। এ বিষয়ে দুই গৃহবধূ বাদী হয়ে দুইজনকে আসামী করে মির্জাপুর থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ দেয়ার চার দিনেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে ভূক্তভোগী গৃহবধূরা অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের খাটিয়ারহাট টান পলাশতলী গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে আশিক মিয়া (২৫) ও একই গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে আমিনুর মিয়া (২৫) পার্শ্ববর্তী বাড়ির জহির উদ্দিনের বাড়িতে মাঝে মধ্যে টিভি দেখতো। এই দুইজন গত দেড় বছর আগে জহির উদ্দিনের স্ত্রী, তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এবং ভাগিনার স্ত্রীর গোসলের দৃশ্য গোপনে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে। ধারণকৃত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে গত দেড় বছরে বিভিন্ন সময় প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই দুই দুস্কৃতিকারী। এছাড়াও তারা ওই গৃহবধূদের কুপ্রস্তাব দেয়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টাকা নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি, দৃস্কৃতিকারীরা আরও টাকার দাবিতে চাপ দিতে থাকে। এ নিয়ে স্থানীয় মাতাব্বরদের অবহিত করেন ভূক্তভোগীদের পরিবার। বিষয়টি নিয়ে গত ১০ জানুয়ারি রাতে শালিস বৈঠক হয়। সেখানে দুস্কৃতিকারী লম্পটরা ওই ভিডিও ডিলিট করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ভিডিওটি ডিলিট না করে তারা তিন গৃহবধূর গোসলের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এতে ভূক্তভোগী ওই তিন নারী এবং পরিবারের সদস্যরা সামাজিক ভাবে হেয় হয়ে পড়েছেন সেইসঙ্গে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
ভূক্তভোগী তিনজনের মধ্যে দুইজন দুই দুস্কৃতিকারীর নাম উল্লেখ করে ১২ জানুয়ারি মির্জাপুর থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দেয়ার চার দিন পার হলেও পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
ভূক্তভোগীরা শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধায় মির্জাপুর প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান, তাদের গোসলের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আশিক এবং আমিনুর প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আরও টাকা দাবি করছে। বিষয়টি তাদের পরিবারের কাছে বিচার দেয়া হয়। তারা কোন প্রতিকার না করায় স্থানীয় মাতাব্বরদের জানালে গত ১০ জানুয়ারি রাতে শালিস হয়। সেখানে তারা গোসলের দৃশ্য ভিডিও করার কথা স্বীকার করে এবং তা ডিলিট করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তারা ভিডিও ডিলিট না করে ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমদের সংসারে অশান্তি দেখা দিয়েছে। তাছাড়া পরিবারের সদস্যরাও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। আমরা তাদের বিচার দাবি করছি। গত চার দিন আগে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের বিচার না হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের আর কোন পথ থাকবে না।
অভিযুক্ত আশিক ও আমিনুরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলু মিয়া জানান, গ্রামের মাতাব্বর শহীদুর রহমান, তমিজ উদ্দিন, ফজলু মিয়া, শরীফুল ইসলামসহ গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে শালিস বৈঠক হয়। শালিসে অভিযুক্তরা গোসলের দৃশ্য ভিডিও করার বিষয়টি স্বীকার করে তা ডিলিট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।
মির্জাপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে।