
নুর আলম, গোপালপুর ॥
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ব্যাপকহারে মড়কের প্রাদুর্ভাব ঘটায় সর্বশান্ত হচ্ছে পোল্ট্রি খামারীরা। প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগি। মড়ক রোধে প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ খামারিদের।
গোপালপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মুরগীর সংখ্যা ৭,৪১২০৬টি, হাঁসের সংখ্যা ১,০৩৫৫৬টি, লেয়ার মুরগীর খামার ৩৭০টি, ব্রয়লার মুরগীর খামার ১৬৬টি, সোনালি মুরগীর খামার ২৪টি। এই উপজেলায় নিবন্ধনকৃত মুরগীর খামার রয়েছে ১৬টি।
পোল্ট্রি খামারিরা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে ডিমের দাম পড়ে গেছে। মুরগীর দামও তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু খাদ্য, ভ্যাক্সিন ও ওষুধের দাম বাড়ছেই। ফলে বেকার যুবক ও উদ্যোক্তা, যারা ব্যাঙ্ক ঋণ বা ধারদেনা করে খামার করেছিল, তারা লোকসানে পড়েছেন। গোঁদের উপর বিষফোড়ার মতো দেখা দিয়েছে মড়ক। প্রতিদিন শত শত মুরগী মারা যাচ্ছে। অনেক খামারি এর মধ্যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে। গোপালপুর উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের মাকুল্লা গ্রামের শামীম হোসেন ও চরশিমলা গ্রামের রুবেল হোসেনের খামারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১২শ’ করে মুরগি মারা গেছে বলে তারা জানান। তারা বলেন, রোগাক্রান্ত মুরগি প্রথমে ঝিঁমুতে থাকে। পরে দপ করে মারা যায়।
রুবেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসার জন্য গোপালপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে ভালো সার্ভিস দেয় না। আবোল তাবোল কোম্পানির ওষুধ লিখে দেয়, তাতে কোন কাজই হয় না। এ অবস্থায় মধুপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের সহযোগিতা নিচ্ছেন। এটি বার্ডফ্লু না রাণীক্ষেত রোগ তাও শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে পোড়াবাড়ী গ্রামের শফিক মিয়ার খামারের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মুরগী মারা গেছে। একই গ্রামের মামুন মিয়ার এক হাজার সাতশ’, চন্দবাড়ী গ্রামের মোশারফ হোসেনের প্রায় ২ হাজার, আভুঙ্গি গ্রামের আব্বাস আলীর ১ হাজার ২শ’, চন্দবাড়ী আলম হোসেনের প্রায় ৩ হাজার, হাশেম মিয়ার ১ হাজার ৭শ’ এবং মাইনুল হোসেনের ৪শ’ মুরগী মারা যায়। কমবেশি সব খামারেই মুরগি মরছে প্রায় প্রতিদিন। ভূক্তভোগী খামারীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ও মাঠ কর্মী কখনো খামার পরিদর্শন করতে আসেন না। কারিগরী ও সময়োচিত পরামর্শ না পেয়ে খামারীরা দুর্যোগ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন।
গোপালপুর বাজারের ফিড ব্যবসায়ী এবং ভেটেরিনারি কর্ণারের মালিক শফিকুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহ আগে দুইটি খামারের সাড়ে তিন হাজার মুরগি মারা যাওয়ায় ব্যাপক লোকসানে পড়েছে।
প্রাণী সম্পদ খাতের ওষুধ উৎপাদনকারি একমির আঞ্চলিক কর্মকর্তা এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ নাসির আহমেদ মড়কের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঘাটাইল ও গোপালপুর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত ফাউল কলেরা ও টাইফয়েড। কোন কোন স্থানে রাণীক্ষেত রোগও দেখা যাচ্ছে। খামারিদের মধ্যে তিনি কাজ করছেন। মৃত মুরগি মাটিতে পুঁতে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
গোপালপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ অর্জুন দেব জানান, খামারে মড়কের প্রাদুর্ভাব ঘটার খবর তিনি জানেন না।
গোপালপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ গোলাম মোরশেদ জানান, পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না এটা বার্ড ফ্লু কিনা। আপাতত কিছু পরিক্ষায় মনে হচ্ছে ওটা রাণীক্ষেত রোগ। কতগুলো খামারের মুরগি মড়কে শেষ হয়েছে তিনি জানেন না।
ঘাটাইল উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ বাহাউদ্দিন সরোয়ার রিজভী জানান, ব্যাকট্রেরিয়াল ডিজিসসহ রাণীক্ষেত রোগ এবং হিট ট্রোকে কিছু মুরগি মারা যাচ্ছে। সময়মতো তাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্যক্সিনেসন না করায় এমনটি হচ্ছে বলে তিনি বলেন।