
নুরুল ইসলাম, দেলদুয়ার ॥
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে ২০০৩ সালে শুরু হওয়া রুরাল ট্যালেন্ট এডভান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (আরট্যাপ) কার্যক্রম চলমান আছে। পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রমের পরিসর বড় বড় হয়েছে এবং স্থানীয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। স্থানীয়রা এ কার্যক্রমকে “স্পন্দনবি বৃত্তি” বলে নাম দিয়েছেন। ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত স্পন্দনবি মেধাবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬৫০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৫০ জন মেধা তালিকায় স্থান পায়। বিদ্যালয় পর্যায়ে মেধাবীদের উৎসাহ প্রদানে ২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২৫০ জন, প্রতি বিদ্যালয় থেকে ১০ জন এবং প্রতি শ্রেনী থেকে ২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাধারণ গ্রেডের বৃত্তির জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। স্পন্দনবি মেধা বৃত্তির আওতায় ৩০০ জন শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রমটি পুরো উপজেলায় দারুন সাড়া ফেলেছে।
আবার দেলদুয়ার উপজেলা থেকে এসএসসি পর্যায়ে ভাল ফলাফল করা মেধাবীদের “ইফফাত আরা বৃত্তি” প্রদান করা হচ্ছে। স্পন্দনবি-র এ কার্যক্রম ২০১৩ সালে ৬ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন বৃত্তি প্রদান করে কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৪ সাথে এসএসসি ভাল ফলাফল করা ৫৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের আজ এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) স্পন্দনবি মোট ৩৫৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা এককালীন বৃত্তি টাকা তুলে দেয়া হয়। এ মহান কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত দেলদুয়ারের কেউ না স্পন্দনবি সম্পর্কে জানত না। স্পন্দনবি’র কেউ দেলদুয়ার বা এর বসবাসকারী কাউকে জানত না। ২০১৬ সালে দেলদুয়ার থেকে বিগত ৯ বছর মোট ১০ বছরে এসএসসির ফলাফলের তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, দেলদুয়ারে স্পন্দনবি-র বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রম “রুরাল ট্যালেন্ট এডভান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (আরট্যাপ) এর ভূমিকা অনন্য এবং অসাধারণ। বিশ্লেষণে দেখা যায়, সারা দেশে যে হারে পাশের হার বেড়ে, দেলদুয়ারে তার চেয়েও ৪-৭% বেশি হারে ভাল হয়েছে ফলাফল।
এ ফলাফল স্পন্দনবি সংশ্লিষ্ট সবাই আশাবাদী করেছে, আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তাছাড়া দেলদুয়ার ঢাকার কাছাকাছি হলেও, নানান দিক দিয়ে এ উপজেলাকে বেশ পিছিয়ে পড়া মনে হতো। এ উপজেলার স্পন্দনবি এ বিশাল কার্যক্রম চালু বাঞ্চনীয় মনে হয়েছে সবার কাছে। তাছাড়া এ কার্যক্রমের সাথে উপজেলা প্রশাসন, সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আগ্রহ এবং সহযোগিতা, শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ এবং এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্পন্দনবি বাংলাদেশ অফিসের সততা, নিষ্টা, এবং নিবেদিত হয়ে প্রতিটি কাজ সসম্পুর্ন করা ইত্যাদি এ কার্যক্রমকে ২২/২৩ বছর চলমান রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দেলদুয়ার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্পন্দনবি ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন স্পন্দনবি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দেলদুয়ার উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অপু তালুকদার শিপলু, সাংবাদিক বাবলু চৌধুরীসহ বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবকগণ প্রমূখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্পন্দনবি সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রাজিবুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগীতা করেন স্পন্দনবি প্রোগ্রাম অফিসার আব্দুল জব্বার, সাজ্জাদ হোসেন এবং স্পন্দনবি ইন্সটিটিউটের ইন্সট্রাক্টর রাশেদ সরকার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ৩ শতাধিক অভিভাবক এবং উপজেলার ২৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।