স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বৃদ্ধ মা, দুই ছেলে ও এক ছেলের বউকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে ৯৯৯ এ কল করে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা মুক্ত হওয়ার পর একজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বউ-শ্বাশুড়ি মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ নিয়ে মধুপুর থানা মামলা নিচ্ছে না অভিযোগ উঠলেও অফিসার ইনচার্জ লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় মামলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে মধুপুর পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের পুন্ডুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গাছে বাঁধা অবস্থায় নির্যাতনের শিকাররা হলেন- ওই গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী শাফিয়া বেগম (৫৫), বড় ছেলে আলমগীর হোসেন, ছোট ছেলে জুব্বার আলী ও আলমগীরের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আলমগীরকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ও শাশুড়ি শাফিয়া এবং ছেলের বউ জ্যোৎস্নাকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, পুন্ডুরার মৃত নুরুল ইসলামের দুই ছেলে আলমগীর, জুব্বারের সাথে প্রতিবেশী মৃত আবু সেকের ছেলে কালু মিয়া সেখসহ তার ভাইদের সাথে ১.১৯ একর জমি নিয়ে বিরোধ বহুদিন থেকে। দুইপক্ষের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। দীর্ঘ ২৩ বছর বাটোয়ারা মামলা চলার পর চলতি বছরের গত (২৯ জানুয়ারি) আলমগীর জুব্বাররা রায় পেয়ে জমির খাজনা খারিজ করেছেন। মাঠ ও প্রিন্ট পর্চা তাদের নামেই এসেছে। প্রতিপক্ষ কালু মিয়া সেক, ভাই আজগর, সামাদরা এ নিয়ে গত কয়েক মাস আগে ওই জমির মালিক দাবি করে আদালতে ১৪৪ জারি চেয়ে আবেদন করলে আদালত স্থানীয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ১৪৪ ধারা জারি করে। আলমগীর, জুব্বাররা কাগজপত্রের ভিত্তিতে ১৪৪ ধারার বিপরীতে জজ কোর্টে আপিল করেছেন। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে দুই পরিবারে উত্তেজনা চলছিল। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে কালু মিয়া গং বিবাদমান ৬০ শতক জমিতে গিয়ে ঘর নির্মাণ শুরু করেন। আলমগীর, জুব্বাররা বাঁধা দিতে গেলে তাদের প্রথমে পিটিয়ে পরে গাছের সাথে বেঁেধ ফেলে তারা। মা শাফিয়া ফেরাতে গেলে প্রতিপক্ষ তাকেও গাছে বেধে ফেলেন। শ্বাশুড়িকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন পর্দানশীল ছেলের বউ জ্যোৎস্না বেগম। ওই ছেলের বউকেও বাদ দেয়নি প্রতিপক্ষ। তাকেও হাত পা বেধে বসিয়ে রাখেন। এ অবস্থায় পুলিশকে ফোন দিয়ে জানানো হলেও পুলিশ দ্রুত না আসায় নির্যাতিতদের পক্ষে ৯৯৯ এ কল করে সাহায্য চাওয়া হয়। পরে মধুপুর থানা পুলিশ এসে বাধা অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশীদ ওস্থানীয় মাতাব্বররা ঘটনা স্থলে এসে উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। মধুপুর থানাকে ফোন করে জানানো হয়। কাউন্সিলর হারুন রশীদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এদিকে পুলিশী উদ্ধার শেষে আহতদের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আলমগীরকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। শাশুড়ি শাফিয়া, ছেলের বউ জ্যোৎস্নাকে মধুপুর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। জুব্বারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়ছে।
এ বিষয়ে মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ লিখিত দেয়নি বলে মামলা হয়নি জানিয়ে ওসি আজিজুর রহমান আরও বলেন, দুইপক্ষ কে ডেকে এনে ১৪৪ ধারা জারি ও তার আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তি রক্ষায় জমিতে যেতে বারণ করা হয়েছে।