টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ মাংস সমিতি

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল দেলদুয়ার লিড নিউজ

সাদ্দাম ইমন ॥
চাঁদার টাকায় কেনা হয়েছে গরু। জবাই করে ভাগাভাগি করে নেওয়া হবে মাংস। ঈদের আগমুহূর্তে সারা দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে গরুর মাংস। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা পড়ছেন দুচিন্তায়। এমন পরিস্থিতিতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লায় চলছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ মাংস সমিতি।
জানা যায়, মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা এই সমিতির সদস্য হয়ে থাকেন। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা ওঠানোর পর ঈদের এক সপ্তাহ আগে হাট থেকে পশু কেনা হয়। এরপর ঈদুল ফিতরের আগের দিন পশু জবাই করে মাংস সমিতির সদস্যরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এ যেন এক প্রচলিত প্রথায় পরিণত হয়ে উঠেছে।
আরও জানা গেছে, বছরের প্রতি মাসে ২০০/৩০০ টাকা করে চাঁদা তুলে বছর শেষে ঈদের সময় জমানো টাকা দিয়ে পশু কেনা হয়। এ ধরনের সমিতিতে সাধারণত সদস্য সংখ্যা ৩০/৪০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঈদের দু’একদিন আগে গরু কিংবা ছাগল জবাই করে মাংস ভাগ করে নেওয়া হয়। শুরুতে শুধু নিম্নবিত্তের লোকরা এ ধরনের সমিতি করলেও এখন মধ্যবিত্তের পরিবারের সদস্যরাও এ সমিতিতে যোগ দিচ্ছেন।
এবার ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এ ধরনের মাংসের সমিতি গঠন হয়েছে বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লাগুলোতে। স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম গোশত সমিতি নামেও পরিচিত। আবার অনেকের কাছে মাংস বা গরু সমিতি নামেও পরিচিত লাভ করেছে। মাংস সমিতির মাধ্যমে মাংস ভাগবাটোয়ারা করে মানুষ ঈদের আগে সবাই বাড়তি আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। এমন মাংস সমিতির সদস্য মিলন হোসেন বলেন, বাজারে যেভাবে সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষরা গরুর মাংস খাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছি। ঈদের দিন ছেলেমেয়েদের বায়না থাকে গরুর মাংস খাওয়ার। এক সঙ্গে তো অতো টাকা জোটানো সম্ভব হয় না। এজন্যই মাংস সমিতির মাধ্যমে প্রতিমাসে চাঁদা দিয়ে ঈদের দিন ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটু পোলাও মাংস খেতে পারি।
মাংস সমিতির আরেক সদস্য সালাম চাকলাদার বলেন, আমরা প্রতি মাসে চাঁদা তুলি। এতে সদস্যদের টাকা দিতে কষ্টও কম হয়। মাংস সমিতির মাধ্যমে নিজেরা গরু কিনে এনে ভালো মাংস পাওয়া যায়। বাজারের চেয়ে কেজি প্রতি মাংসের খরচও কম পড়ে। মাংস সমিতির মূল উদ্যোক্তা রানা মিয়া বলেন, সমিতিতে এবার ৪০ জন সদস্য আছে। প্রতি মাসে সদস্য প্রতি ২৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। ঈদের দু’একদিন আগে গরু কিনে জবাই করে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। বাজারের চেয়ে মাংসের কেজি তুলনামূলক অনেক কম দাম পরে।
স্থানীয়রা বলেন, শহর কিংবা গ্রামগুলোতে মাংস বা গোশত সমিতি এখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সমিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ ধরনের সমিতির কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জোরদার হচ্ছে। সারা বছর একটু একটু টাকা সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে ঈদের আনন্দ পেয়ে থাকেন। এ ধরনের মাংস সমিতি সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ।

 

৫০ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *