বাসাইলে বিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজিতে মাথায় হাত কৃষকের

কৃষি টাঙ্গাইল বাসাইল লিড নিউজ

আরিফুর রহমান, বাসাইল ॥
টাঙ্গাইলের বাসাইলে একসপ্তাহে ধরে দিন ও রাতভর চলছে বিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজি। বিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা দাবদাহের সঙ্গে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বাসাইলে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে সেচ কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কৃষকের ধানের জমি ফেটে যাচ্ছে। এমন লোডশেডিং চলতে থাকলে সোনালী ফসল ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন চাষীরা।
বাসাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বাসাইলে ১১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। চাষি বীরেন সরকার বলেন, বিদ্যুৎ থাকে না আমাদের জমি ফেটে গেছে। ২৪ ঘন্টায় ৫ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। এমনভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের জমিতে ধান হবে না। আমরা না খেয়ে মারা যাবো। চাষি দয়াল সরকার বলেন, যেভাবে বিদ্যুৎ থাকে এভাবে থাকলে আমরা চাষিরা না খেয়ে মারা যাবো। আমাদের জমি ফেটে গেছে। বিঘাতে ৪০ মণ ধান হয়, জমিতে ঠিকমতো পানি না দিতে পারলে ১০ মণ ধান পাবো না।
সেচ পাম্পের মালিক পরেশ সরকার বলেন, আমাদের জমির মাঠ ফেটে গেলো, এমনভাবে চললে আমাদের ধান জমি মারা যাবে। বিদ্যুৎ থাকে না কিভাবে জমিতে পানি দেয়। জমির মালিকরা আমাদের মারতে আসেন। জমিতে পানি চারভাগের এক ভাগ জমিতে যাইনা বিদ্যুৎ চলে যায়। আমরা কিভাবে মাঠ বাঁচাবো। বিদ্যুৎ যাই আর আসে। সেচ পাম্পের মালিক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ধানের জমিতে যে সমস্যা হচ্ছে, প্রতিদিন ১০-১২ বার বিদ্যুৎ যাই আর আসে। ১০ মিনিট হয় আসে আবার চলে যাই। আমাদের জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে পানি দিতে দুইদিন সময় লাগে। যাদের মাঠে ১৫-২০ বিঘা জমি আছে তাঁরা কিভাবে কৃষকের মাঠ বাঁচাবে। পল্লী বিদ্যুৎতের লোকদের কিছু বললে তাঁরা কিছু বলতেছে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন তাঁরা যদি আমাদের সমস্যাগুলো দেখেন তাহলে আমরা এই সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবো। জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে, সেচ দিতে না পারলে আমাদের সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবো না।
বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, ধান গাছ সেচ নির্ধারক খাদ্যক। কম সেচের অভাবে ধান গাছের বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্থ হয়। বিদ্যুৎতের অভাবে কৃষক ঠিক মতো সেচ না দিতে পারলে ধানের ফলনের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

বাসাইল জোনাল বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম অঞ্জন কুমার সরকার জানান, বিদ্যুৎতের উৎপাদন কম। আমরা যা বরাদ্দ পাচ্ছি সেভাগে অনেক কম। যেখানে বাসাইলে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন আর আমরা পাচ্ছি ৭ মেগাওয়াট। আমরা বিদ্যুৎ বিতরণ করি। জেনারেশন করে সরকারের আরেকটি ডিপার্টমেন্ট জেনারেশন ডিপার্টমেন্ট। জেনারেশন হচ্ছে না, জেনারেশন কম হচ্ছে, বরাদ্দ কম। তার মধ্যে ২২ মেগাওয়াটের মধ্যে ৭ মেগাওয়াট পাচ্ছি। বরাদ্দ যেটা হয় সেটাও আবার পিডিবি পাই ৫৮% আর আমরা পাই ৪২%। কলকারখানা বন্ধ হলে ঈদের আগে বিদ্যুৎতের অবস্থা ভালো হবে।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, বাসাইলের প্রায় জমি ইরিগেশনের আওতাধীন। আমি প্রতিদিন কৃষকের মাঝে ঘুরি, প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামে ঘুরেছি। প্রতিটি জমি বাই জমি দেখেছি। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমি কৃষকের জমি দেখেছি। অনেক জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে পানি না দেওয়ার কারণে। বর্তমান ৭ দিনে বিদ্যুৎতের এতো খারাপ অবস্থা বাসাইলে। গ্রাম পর্যায়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩-৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা কষ্টে থাকতে পারি, কৃষকরা বাস করতে পারে সাময়িক কষ্টের জন্য। কিন্তু ধান ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ খাবে কি? খাদ্য পাবে কোথায়? আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডিজিএম, এজিএম ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। সকলে আশাস্ত করেছেন দুই-একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎতের পরিবর্তন হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট সেখানে আছে ১২ হাজার মেগাওয়াট। সেখানে বাসাইল তিন-চার ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। সেখানে যদি বিদ্যুৎ সঠিক ব্যবহার হয় ২০ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাবে। কেনো পাচ্ছি না, যারা জেনারেশন করে তাঁরা যদি এক কেন্দ্রিক করে কৃষককে ম্যারে শহরের মানুষকে বাঁচাবে এটা তো হয় না। প্রয়োজন মতে এই ১৫ দিন শহরে বিদ্যুৎ কমিয়ে দিয়ে হলেও কৃষককে বিদ্যুৎ দিতে হবে। আমার ধান বাঁচাতে হবে, মানুষ বাঁচাতে হবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। দেশ বাঁচলে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সুধীর হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন- এই সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। এই সময়ে ১৫ দিনের ঘাটতিতে যদি কৃষক মরে যায়, ধানের উৎপাদন না হয়, অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা বিদ্যুৎ জেনারেশন করেন, যারা বিদ্যুৎতের ব্যবহার করেন তাদের কাছে অনুরোধ করবো যে আমার বাসাইলে কৃষক বাঁচানোর জন্য ফসলি জমি বাঁচানোর জন্য বিদ্যুৎতের যে সমস্যা রয়েছে দূর করা। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি। আর যদি বিদ্যুৎ দুই-একদিনের মধ্যে ঠিক না হয় তাহলে কৃষক রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে, সেক্ষেত্রে আমরাও তাদের পাশে থাকতে বাধ্য হবো। কারণ বাসাইলের মানুষকে বাঁচাতে হবে, মাটিকে বাঁচাতে হবে, ফসলকে বাঁচাতে হবে।

 

 

২৯৭ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *