মির্জাপুরের লতিফপুরে পাহাড়ের লাল মাটির টিলা কেটে বিক্রি

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল দুর্নীতি মির্জাপুর লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
সবাই মাটি কাটে রাতে, আমি কাটি দিনে-রাতে। প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের জানিয়েই দিনে-রাতে মাটি কাটছি। সংবাদ লিখেন আমার কিছুই হবে না, দম্ভ করে এমন কথা বলেন, মাটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর দেওয়ান। কাউকে পরোয়া করছেন না তিনি। সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে মাটি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর দেওয়ান সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
জাহাঙ্গীর দেওয়ান টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার লতিফপুর ইউনিয়নের লতিফপুর নৌকারচালা, শেরখারচালা, ট্যাকপাড়া ও কদমা গ্রামের লাল মাটির টিলা ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে ভাড়ি ড্রাম ট্রাকে দিনে-রাতে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি। জাহাঙ্গীর এ উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের রহিজ উদ্দিন দেওয়ানের ছেলে। নির্বিচারে পাহাড়ের লাল মাটি কেটে নেওয়ায় পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশাসন ও উপজেলাবাসী যেন নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।
প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালালেও অজ্ঞাত কারণে লতিফপুর ইউনিয়নে অভিযান চালানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। মাটি ভর্তি অভারলোডের ভাড়ি ডাম্প ট্রাক চলাচল করায় গ্রামের রাস্তা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক পাকা সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবাদী ফসল, সবজি খেত ও রাস্তার পাশের বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে।

জানা গেছে, একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে নিয়ে মির্জাপুর উপজেলা গঠিত। এ উপজেলার গোড়াই, আজগানা, লতিফপুর, বাঁশতৈল ও তরফপুর ইউনিয়ন পাহাড়ি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই পাঁচ ইউনিয়নে ছোট-বড় বেশকয়েকটি লাল মাটির টিলা রয়েছে। আর এসব টিলার মধ্যে নজর পড়ছে মাটি ব্যবসায়ীদের। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মাটি ব্যবসায়ীরা গত চার মাস যাবত দিনে-রাতে ভেকু মেশিন দিয়ে টিলার লাল মাটি কেটে ভাড়ি ড্রাম ট্রাকে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। মাটি ভর্তি অভারলোডের ভাড়ি ডাম্প ট্রাক চলাচল করায় গ্রামের রাস্তা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। আবাদ করা ধান খেত, সবজি খেত, রাস্তার পাশের বাড়িঘর, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে।
উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। প্রত্যেক ভেকুতে ৮ থেকে ১০টি ডাম্প ট্রাক চলাচল করে। কয়েকটি ভেকুতে মাহিন্দ্র দিয়েও মাটি পরিবহন করা হয়। টিলার লাল মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির পাশাপাশি সমতল করা জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ আবাস্থল গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি। এ অবস্থায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও চক্রটির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে, জাহাঙ্গীর দেওয়ান, আমিনুর, আবিদ শিকদার, শহিদুল দেওয়ান ও জুলহাস টিলার লাল মাটি কাটছেন। মাটি কাটার আগে কাটা হচ্ছে গজারি, আকাশমনি, কাঠাল গাছ, বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ভেকু মেশিন দিয়ে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে এতে কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি ও পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র হুমকির হুমকির মুখে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, রাতে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় বিপুল সংখ্যক মাটির ডাম্প ট্রাক চলাচল করে। এছাড়া দিনের বেলায়ও ডাম্প ট্রাক ও মাহিন্দ্র দিয়ে মাটি পরিবহন করা হয়। এতে রাস্তা ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না প্রতিদিন তা বাড়ছে।

লতিফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শিকদার বলেন, লতিফপুর ইউনিয়নে টিলার লালমাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার সূত্রধর জানান, মির্জাপুরে টিলার লাল মাটি কাটায় ইতোমধ্যে ১৪ জন মাটি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নামে মামলা করা হয়েছে।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান জানান, প্রতিদিন ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে ভেকু মেশিন ও ডাম্পট্রাক আটক করে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মাটি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 

 

 

 

 

২০ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *