তীব্র তাপদাহে টাঙ্গাইলে চলছে মাসব্যাপি হস্ত ও কুটির শিল্প পণ্য মেলা

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
তীব্র তাপদাহ ও প্রচন্ড গরমে টাঙ্গাইলে চলছে মাসব্যাপি হস্ত ও কুটির শিল্প পণ্য মেলা। শহরের কালেক্টরেট মাঠ প্রাঙ্গণে এ মেলার আয়োজন করেছে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ)। স্বাস্থ্য ঝুঁকির সরকারি নানা নির্দেশনা সত্ত্বেও মেলার এ আয়োজন কতটা যৌত্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলার সচেতন মহল।
অন্যদিকে বহু আগেই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ)। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে দুইমাসের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ) নির্বাচনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও কিভাবে পেল মেলার অনুমতি? আর মেলার আয়োজনের আবেদনকারীই বা জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কোন পদের দায়িত্বে রয়েছেন সে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় নেতৃবৃন্দ। অথচ মেলার যে আবেদনকারী সে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ) কমিটির কেউ না।
এর আগে গত (৩১ জানুয়ারী) বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ৬০ দিনের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ) নির্বাচন পরিচালনার জন্য সাত সদস্যের একটি এ্যাডহক কমিটি গঠণ করে দেয়। কমিটির আহ্বায়ক ফজলুর রহমান খান ফারুক, সদস্যরা হলেন- ছানোয়ার হোসেন এমপি, এ হাসান ফিরোজ, ঝোটন ঘোষ, শামসুল হক, খন্দকার শহিদুল আহমেদ রঞ্জন ও বজলুর রহমান। গঠিত এ্যাডহক কমিটির মেয়াদও গত (১ এপ্রিল) শেষ হয়ে গেছে। বাফুফের গঠন করে দেয়া এই এ্যাডহক কমিটিও ৬০ দিনের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ) নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেনি।

এদিকে মেয়াদ উর্ত্তিণ টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ) কমিটির আয়োজনে গত (২১ এপ্রিল) থেকে মাসব্যাপি শুরু হয়েছে হস্ত ও কুটির শিল্প পণ্য মেলা। মেলার স্টল সংখ্যা ৮৬ হলেও চালু হয়েছে ৩১টি, প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। এখানে শিশুদের জন্য রাইটস্ রয়েছে নৌকা, নাগরদৌলা, ভুঁতের বাড়ি ও ট্রেন। রাইটস্ অনুযায়ি নির্ধারণ করাও হয়েছে ফি। দেখা গেছে, বর্ণাঢ্য আয়োজনে চলছে মেলা। বাহারী গেট, রং বেরংয়ের লাইটিং আর পানির ফোয়ারায় আলোকিত মেলা প্রাঙ্গণ। শিশু থেকে স্কুলগামী প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম রয়েছে মেলা স্থলে।
মেলায় আগত শিশু সিয়াম, মিনিসহ কয়েকজন শিশু জানায়, মেলায় ঘুরতে এসেছি। খুব গরম আর মানুষ বেশি থাকায় ঠিক মতো আনন্দ করতে পারছি না। অভিভাবক কবির, মামুন ও গৃহবধূ আসমা বলেন, টাঙ্গাইলে বিনোদনের তেমন কোন জায়গা না থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে এতো গরমেও মেলায় এসেছি। বাচ্চাদের কি সমস্যা বোঝানো যায়। কলেজ শিক্ষক সাইদুর, লিটু, সোহেলসহ সচেতন সমাজের অনেকেই বলেন, গরমের তীব্রতা আর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সরকারিভাবে নানা ধরণের সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই সময়ে এতো বড় ধরণের মেলার আয়োজন করা ঠিক হয়নি। যে ধরণের মেলাই হোক না কেন, সেখানে দর্শনার্থী হিসেবে শিশুরাই বেশি আসে। এ কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
মেলা পরিচালনাকারী এ.কে.এন আরিফুর রহমান বাবু বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে মেলা পরিচালিত হচ্ছে। দাবদাহের কারণে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একই সাথে সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরণের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় স্টল সংখ্যা কম হলেও দর্শনার্থী ভালোই আসছেন। মূলত শুক্র ও শনিবার প্রচুর দর্শনার্থী মেলা প্রাঙ্গণে আসেন।
প্রশাসনের কাছে মেলার আবেদনের দিন, তারিখ নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ’র) কতিথ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দানকারী রঞ্জিত রায় বলেন, মেলার আবেদন এ্যাডহক কমিটি গঠণের আগেই করেছেন তিনি।

টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ’র) এ্যাডহক কমিটির সদস্য এ হাসান ফিরোজ বলেন, সংগঠনের নামে হস্ত ও কুটির শিল্প পণ্য মেলা বাবদ ৩০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে আমি শুনেছি। তবে টাকাটা কোথায় গেছে সেটি আমি জানি না। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ’র) এ্যাডহক কমিটি বাফুফে থেকে গঠণ করা হলেও এখন পর্যন্ত আমরা কোন সভা করতে পারিনি। নির্বাচন আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে সেটিও অনিশ্চিত। তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত কমিটি ব্যতিত সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব নির্বাচন করা যায় না। এরপরও কিভাবে টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ’র) কতিথ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদের পরিচয়ে মেলার আবেদন করা হলো আর কিভাবেই বা অনুমতি পেল সেটি নিয়ে আমি নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম জানান, মেলার আবেদন টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ’র) নামেই করা হয়েছে। অনুমতিও পেয়েছেন তারা। স্কুল বন্ধ থাকা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি মেলায় একটি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করছে।

 

 

 

 

 

১৩০ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *