ঘাটাইলে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ছে শাল-গজারি বন

অপরাধ ঘাটাইল টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল দুর্নীতি লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
শাল-গজারির বনে ঘেরা পাহাড়ি অঞ্চলটি। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার এ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা নিয়ে রয়েছে বিশাল শাল-গজারি বন। বছরের পর বছর সবুজে ঘেরা এ বনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে একটি চক্র। বন বিভাগের আওতাভুক্ত সরকারি এ বনের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলছে। শুকনো মৌসুমে ঝরা পাতায় বনে বেশি আগুন দেখা যায়। বন বিভাগের অসাধু কিছু কর্মচারী ও মাদকসেবী এ আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে বন দখলের পাশাপাশি হুমকিতে জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিন দেখা যায়, ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জের সাগরদিঘী বিটের আওতাধীন কামালপুর গ্রামের ফকির মার্কেট এলাকায় দিনে দুপুরে আগুনে জ্বলে উঠে বন। অপরদিকে একই এলাকার ভূঁইয়া বাড়ি মোড়, কয়েদিসহ আশেপাশে থাকা বনে দুর্বৃত্তরা দেয় আগুন। এতে পুড়ছে বনের ছোট-বড় গাছপালা। বাতাসের কারণে মুহূর্তেই আগুন বনের গভীর থেকে গভীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বনের ভেতরে থাকা পশুপাখি বন থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর এই মৌসুমে বন পুড়ে আগুনে। রাতে ও দিনে সুযোগ বুঝে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। জুয়ারী ও মাদকসেবীরা রাতে বন পুড়ে দেয়। তবে কে বা কারা আগুন দিচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগান বন বিভাগের অসাধু কর্মচারীরা। আগুন দেওয়ার ফলে বনের ছোট গাছ পুড়ে যায়। প্রতি বছর বনে আগুন দিলে নতুন করে কোনো গাছ বেড়ে উঠতে পারে না। পরে বয়স্ক গাছগুলো সরকারি বিধি মেনে কাটা হয়। এরপর সেখানে টাকার বিনিময়ে ঘরবাড়ি-দোকানপাট তুলে দেন বন বিভাগের কর্মচারীরা। তবে এ বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না উর্দ্ধতন বন কর্মকর্তাদের।
কামালপুর এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, প্রতিবছর এ সময় এলে বনে আগুন জ্বলে। প্রভাবশালীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে অসাধু বন কর্মকর্তারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। রাত-দিনে সুযোগ বুঝে তারা আগুন দিয়ে চলে যান। এতে বন ধ্বংস করে এখানে বাড়িঘর তুলে নিতে পারলে তাঁদের লাভ। নায়েব আলী বলেন, বনের ভেতর গরু-ছাগল পালন করতে হয়। আগুনে ঘাস, লতা-পাতা ও কীটপতঙ্গ ধ্বংস হয়। মধ্য রাতে বেশি আগুন দেওয়া হয়। মাদকসেবী অথবা বন বিভাগের লোকজন আগুন ধরিয়ে দেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সাগরদিঘী বিটের দায়িত্বে থাকা বন মালী শামছুল হক বলেন, খবর পেয়ে কয়েক জায়গায় আগুন নিভিয়েছি। কে, কখন বনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়, এটা ধরা খুবই কঠিন। মনে হয় নেশাগ্রস্তরা এ আগুন দিতে পারে। আগুন ধরিয়ে বন পোড়ানোর ঘটনায় বন বিভাগের কেউ জড়িত থাকার কথা না।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, বনে আগুন লাগার বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে তাঁদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বন বিভাগের কোনো কর্মচারী বনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকলে তাঁদের খুঁজে বের করা হবে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এই কর্মকর্তা কোন তথ্য দিতে পারেননি।

 

 

৩২ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *