
আব্দুল লতিফ, ঘাটাইল ॥
দেশ ও জলবায়ু ভেদে ফল, ফসল ও উদ্ভিদের রকমফের দেখা যায়। মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে নানা ফলমূল, সবজি ও বৃক্ষ লতা স্বাচ্ছন্দে যেমন বেড়ে উঠে, তেমনি নিজস্বতা নিয়ে আপন বলয়ে বংশ বিস্তার করে থাকে। কিন্তু বাংলার জল ও বাংলার মাটি এতোটাই উর্বর ও সম্ভাবনাময় যে পৃথিবীর বহু ফল, সবজি ও ভেষজ এখানে সহজেই মানিয়ে নেয়। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খুপিবাড়ী গ্রামের মাটিতে ল্যাটিন আমেরিকার পুষ্টিকর ফল ছায়োট/চও চও এর সফল আবাদ সকলকে আশাপ্রদ করে তুলেছে।
জানা যায়, ল্যাটিন আমেরিকান ফল সায়োট/ চও চও মূলত এক ধরনের উন্নত মানের সবজিও বটে। স্বাদে অনেকটা পেঁপের মতো। কাঁচা ও পাকা দুই রকম ভাবেই খাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম সিচিয়াম ই্যডুল। আদিনিবাস মেক্সিকো। তবে ব্রাজিল কোষ্টারিকা, গুয়েতমালা ও হন্ডুরাসে এর প্রচুর আবাদ হয়। সেখানে এটি বহুল
জনপ্রিয় ফল বা সবজি। সায়োটের আকার নাশপাতির মতো। পুষ্টিগুণে ভরপুর ছায়োটে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার এবং ডায়াবেটিসে বেশ উপকারি।
ছায়োট কাঁচা খাওয়া যায়। সালাদ তৈরি করা হলে ভিন্নমাত্রার স্বাদ আনে। সায়োট ভেজে, সিদ্ধ করে, সালুন বানিয়ে, ক্রিম বা চাটনি রুপে খাওয়া যায়। এর শেকড়, বীজ, কান্ড ও পাতা কিছুই ফেলনা নয়। গাছ লাগানোর তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। একটি গাছে অজ ফল আসে। লাউ গাছের মতো নুইয়ে চলে বলে মাঁচা বানিয়ে দিতে হয়।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খুপিবাড়ী গ্রামের হাফিজুর রহমান এবার বাড়ির পুকুর পাড়ে বেশ কিছু সায়োট গাছ লাগিয়েছেন। তাতে থোকা থোকা ফল আসছে। নিজে খাচ্ছেন। পাড়াপড়শিদের মধ্যে বিতরণ করছেন। কিছু বিক্রিও করেছেন। তিনি জানান, দীর্ঘ দিন একটি বিদেশী জাহাজ কোম্পানিতে চাকরি করাকালে পৃথিবীর বহু দেশের বন্দরে এবং পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকায় ছায়োট ফলের স্বাদ নিয়েছেন। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল দেশে স্থায়ীভাবে ফিরে আসার পর বাড়িতে সায়োটের আবাদ করবেন।
গত বছর তিনি ভারতের দার্জিলিং বেড়াতে যান এবং সেখানকার টুরিষ্ট জোন এলাকায় সায়োট আবাদ হতে দেখেন। তিনি সেখান থেকে কিছু সায়োট বীজ সংগ্রহ করে আনেন। সেসব বীজ পুকুর পাড়ে রোপন করেন। লাগানোর তিন মাস পর বেশ কয়েকটি গাছে ফল আসে। দেড় মাস ধরে সেসব গাছ থেকে ফল আহরণ করা হচ্ছে। আরো তিন মাস ফল সংগ্রহ করা যাবে বলে আশা করছেন। ফলণ সন্তোষজনক হওয়ায় আগামী বছর বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের আবাদ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বাড়ির ছাদ বাগানেও এটি আবাদ করা যায় বলে জানান তিনি।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মনোয়ার হোসেন জানান, এটি খুব উন্নত মানের পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল বা সবজি। কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে হাফিজুর রহমান পরীক্ষামূলকভাবে এবার আবাদ করেছেন। এটি একদম নতুন ফল বা সবজি। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে সায়োটের ফলণ খুবই আশাপ্রদ। পোকামাকড় বা রোগবালাইয়ের বাড়তি উপদ্রব নেই। সামনের দিনে বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের চও চওয়ের আবাদ হলে তা লাভজনক হবে বলে কৃষি বিভাগের ধারনা।