
সাদ্দাম ইমন ॥
যখনই পশ্চিম আকাশ হয়ে নিদ্রায় যেতে চায় সূর্যি মামা। নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় শ্বেত মেঘের ভেলা। শরতের সৌন্দর্যের উপমায় থাকে সাদা আকাশ আর শ্বেত রঙে মুগ্ধতা ছড়ানো কাশফুল। চারপাশে দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে মনে সতেজতা ফেরানো কাশফুল। এ মনোরম প্রকৃতি অন্তরের গভীরাংশে নাড়া দেয়। বর্ষার গুড়গুড় শব্দের দিনের শেষে আসে শরৎ। শরতের সাদা-শুভ্রতা নিয়ে দিগন্ত জুড়ে চোখ ধাঁধানো কাশফুলের সমাহার। শ্বেত শুভ্রতার কাশফুলের হাতছানিতে বিমোহিত দর্শনার্থীরা। পথে-প্রান্তরে দেখা মিলে কাশফুলের। কাশফুলের অভয়ারণ্যে মন মিশে একাকার হয়ে ওঠে। জেগে ওঠে প্রাণ। শরতের সাদা শুভ্রতা নিয়ে দিগন্ত জুড়ে চোখ ধাঁধানো কাশফুলের সমাহার প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমোহিত করে। কাশফুলের সৌরভ না থাকলেও এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে মানুষের মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
কাশফুলের মাঠে ছেলেমেয়েরা মেতে উঠেছে আনন্দ উচ্ছ্বাসে। নির্মল বাতাসে কাশফুলের দোল খাওয়া শীষ দেখতে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিকালে ঘুরে বেড়াচ্ছে কাশবনে। পাশাপাশি ভ্রমণ ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে নিজেদের ধরে রাখছেন ছবির ফ্রেমে। দেখা যায়, শুধু কাশবনে গিয়ে কাশফুল দেখা নয় বরং কাশফুলের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে দেখা যায় প্রকৃতিপ্রেমী বহু মানুষকে। দর্শনার্থীরা নিজে শুধু এ নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করেন না। তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন ভঙ্গিমায় কাশফুলের সাথে ছবি তুলছেন। সাদা কাশফুলের মন মাতানো দোল খাওয়া শীষ দেখতে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন বিকেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও যমুনা সেতু মহাসড়কের আশেপাশে, বাসাইল-ভাতকুড়া সড়কের উত্তর পাশে, বাসাইলের হাবলা উত্তরপাড়া খেলার মাঠ জুড়ে, মির্জাপুর উপজেলা পুষ্টকুমারী চড়পাড়া সড়কের দক্ষিণ পাশে, এলাসিন ব্রিজের পাশ দিয়ে নয়ানাভিরাম কাশফুলের ফুটে আছে। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কাশফুলের সমারোহ দেখা মিলছে। এসব স্থানে কাশফুল থাকায় দর্শনার্থীরা আসছে যাতায়াতের সুবিধার জন্য। কাশফুলের শুভ্রতার সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের স্বাক্ষী হতে নিজেরা ছবির ফ্রেমে বন্দী হচ্ছেন।

কাশফুলের মনোরম এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এসব স্থানগুলোতে। ঘুরতে আসা লিজা আক্তার বলেন, কাশফুল দেখে মনটা ভরে গেছে। বান্ধবীদের সাথে করে নিয়ে এসেছি। বিকেল বেলার সময়টা ভালোই লাগছে। অনেকেই নিজেদের ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন। দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসেছে। তারাও তাদের মোবাইল ফোনে দিয়ে নিজেদের ছবি তুলছে ।ছবি তুলতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাসাইলের হাবলা উত্তরপাড়া খেলার মাঠে ঘুরতে আসা রাকিব হাসান বলেন, এবার টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে সবচেয়ে কাশফুল ফুটেছে এই খেলার মাঠে। বিশাল এলাকাজুড়ে এবার কাশফুল আর কাশফুল ফুটে আছে। সেই কারণেই এখানে এসেছি পরিবার পরিজন নিয়ে। অন্য স্থানগুলো কম কাশফুল ফুটেছে। এছাড়া বাসাইলের হাবলা উত্তরপাড়া খেলার মাঠে আসাও সহজ ও যাতায়াত ব্যবস্থাও অনেক ভাল। অপর প্রকৃতি প্রেমি ও কলেজ পড়ুয়া জালাল হোসেন বলেন, বিকেলের বাতাস যেন শীতের আগমনের বার্তা দিচ্ছে। কাশফুলের সমারোহে শৈশবের স্মৃতিগুলোকেও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এই অপরূপ সৌন্দর্যের কাছে থাকতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। কলেজ পড়ুয়া সাব্বির মিয়া বলেন, ঘুরতে কার না ভালো লাগে, আর যদি চোখের সামনে কাশফুল থাকে তাহলে তো কথায় নেই। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতেই এখানে আসা। কাশফুল জানিয়ে দিচ্ছে শরৎকালের উপস্থিতি। কাশফুল তার অপরূপ সৌন্দর্য ডানা মেলে ছড়াচ্ছে।
কাশফুল দেখতে আসা লাবণী আক্তার বলেন, গোধূলির সময় মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসে দুলতে থাকে, তখন তা দেখতে খুবই ভালো লাগে। সুজন পারভেজ ও সজীব নামে দুই দর্শনার্থী বলেন, নানা কারণে আমাদের জীবন কেমন যেন থমকে গেছে। কিন্তু প্রকৃতি তো আর থেমে নেই। প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। তাই আমরাও ছুটে এসেছি এখানে। পরিবেশবিদ মাহমুদ কায়সার বলেন, কাশফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কাশবন দেখতে ও ছবি তুলতে মানুষ জেলার বিভিন্ন স্থানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। ভ্রমণ পিপাসু ও বিনোদন প্রেমিদের নিরাপত্তা, নতুন নতুন বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের আরও বেশি কাজ করা উচিত।






