টাঙ্গাইলে মে দিবসে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের শোডাউন

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর রাজনীতি লিড নিউজ

হাসান সিকদার ॥
শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যে ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, এক হও’ স্লোগান শুধু সাধারণ শ্রমিকদের মুখে মুখেই ছিল। বাস্তবে মহান মে দিবসকে উপলক্ষ করে বুধবার (১ মে) দুপুরে টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ আলাদা স্থানে সমাবেশ করে রাজনৈতিক ক্ষোভ, বিদ্বেষ, বিষোদগার, নিজেদের মধ্যে শো-ডাউন কর্মসূচি পালন করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগে বিভক্তির জেরে এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়। উভয়পক্ষই টাঙ্গাইল পৌর শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন উভয়পক্ষকে পৌর উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি দেননি।
এদিকে বুধবার (১ মে) দুপুরে শহরের শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। উদ্বোধক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক।
জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বালা মিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয় এমপি, ডা. কামরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক প্রমুখ।
এ সময় জেলা ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মী ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শ্রমিকরা বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে মিলিত হয়। পরে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বক্তারা বলেন, শ্রমিকরা আজ সুসংগঠিত। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছি। তবে একটি মহল আবারও টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এসময় বক্তারা আরও বলেন, টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এটি অবৈধ সংগঠন এর কোন অনুমোদন নেই। প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই অবৈধ সংগঠন বাতিল ঘোষণা করে আমাদের শ্রমিকদের আবার শান্তি ফিরিয়ে দিতে হবে। না হলে পরিবহন ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে, আল্টিমেটাম দেন তারা।

অপরপক্ষ একই সময়ে টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠে মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এখানে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। প্রধান বক্তা ছিলেন ঘাটাইল-৩ আসনের এমপি (স্বতন্ত্র) আমানুর রহমান খান রানা। তবে তিনি বক্তব্য না দিয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করে তার নির্বাচনী এলাকায় চলে যান।
টাঙ্গাইল পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) ছানোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান খান সোহেল, পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উদয়লাল গৌড়সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইল জেলায় ক্রিয়াশীল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের বিগত দিনগুলোতে টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে দুই বছর পুর্বে ২২টি শ্রমিক সংগঠন নিয়ে পৌর শ্রমিক ঐক্য পরিষদ গঠন করা হয়। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে এই সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত থেকেই স্থানীয় প্রশাসন পৌর উদ্যানের প্রবেশ পথ, বটতলা মোড়, নিরালা মোড়, মডেল প্রাইমারি স্কুলের মোড়, কালিবাড়ী মোড়ের সামনে ও কলেজ পাড়া চৌরাস্তায় বালুর ট্রাক ও ভেকু দিয়ে আংশিক বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে শহরে কোন রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই দুইপক্ষের শ্রমিক সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

 

 

 

 

৪৯ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *